১৯৯৬ সাল থেকে ২০২০ সাল । দীর্ঘ দুই যুগের অপেক্ষার পর বই আকারে হাতে আসে কাক্সিক্ষত অনুবাদ । একজন অনুবাদক এবং গবেষক মাহবুব বোরহান (জ. ১৬ই নভেম্বর,১৯৬৫) এর এই পথযাত্রার গল্প জানলে পাঠক এবং নতুন লেখকেরা অনুপ্রাণিত হবেন । অনুবাদ সমাপ্ত করে অনুবাদক বাংলা একাডেমিতে এর পা-ুলিপি জমা দেন , অপেক্ষা করতে থাকেন , মূললেখকের অনুমতি নেন কিন্তু বইটি অজানা কারণে আর প্রকাশের আলোকে আসে না । এই বইয়ের পাঠ মাত্রই পারিবারিক জীবনের গল্পের স্বাদ পাওয়া যাবে, সেগল্প অনুবাদক মাহবুব বোরহান এবং দার্শনিক আবুল ফজলের পরিবারের গল্প । বইটি আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আজরা আলাভি ( ১ লা মার্চ, ১৯৪৭) এর
Socio-Religious Outlook of Abul Fazl (1972) (১৯৭২) ’র দ্বিতীয় সংস্কার ১৯৮৩ সালে প্রকাশিত হয় তার বাংলা অনুবাদ ‘আবুল ফজলের ধর্ম ও সমাজ ভাবনা’(২০২০) । বইয়ের মূললেখক আজরা আলাভি আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক । অধ্যাপক আজরা আলাভি মূলত গবেষক , তাঁর অন্যতম গবেষণা লব্ধ বই হলো- ড্রিমস এন্ড ডিসটিনেশনস : এন ইলাস্ট্্েরটেড হিস্টিরি অব হ্যান্ডেড ইয়ারস অব ওমেন্স এডুকেশন ( ১৯০৬-২০০৬) । আবুল ফজল ইবনে মুবারাক (১৫৫১-১৬০২) ছিলেন মুঘল স¤্রাট আবুল- ফতেহ জালাল-উদ-দীন মুহাম্মাদ আকবর (১৫৪২-১৬০৫) এর সা¤্রাজের নব-রতনের একজন । আবুল ফজল ছিলেন আকবরের প্রধানমন্ত্রী । পিতা শেখ মুবারক ( জ. ১৫০৬ )এর কনিষ্ঠপুত্র আবুল ফজল । পিতার কাছে থেকে নানান ধরনের ধর্মীয় শাস্ত্র অধ্যয়নের সুযোগ লাভ করেন । পিতার তৎকালীন সংগ্রামী জীবন আবুল ফজলের জীবনে রেখাপাত করে বলে মত প্রদান করে, আজরা আলাভি বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল হাজির করেছেন । আজরা আলাভি আবুল ফজলের কাজ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে তৎকালীন প্রশাসকদের লেখা নথিপত্রের আশ্রয় গ্রহণ করে । আবুল ফজলের বিরোধীপক্ষের ব্যক্তি বাদাউনির বর্ণনা ব্যবহার করেছেন এবং তার যুক্তিগুলিকে বিশ্লেষণ করেছেন ।
বইয়ের নাম : আবুল ফজলের ধর্ম ও সমাজ ভাবনা
মূললেখক : আজরা আলাভি ; অনুবাদক: মাহবুব বোরহান
প্রকাশন: দাঁড়কাক ; সময়কাল : ফেব্রুয়ারি, ২০২০
বিনিময়: ২৫০ টাকা ; পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৯৬
ঐতিহাসিকভাবে আবুল ফজল ভারতবর্ষের ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আছেন । হুমায়ূন আহমেদের ( ১৯৪৮-২০১২) এর লেখা বাদশা নামদার ( ২০১১) পড়তে গিয়ে সর্বশেষে স¤্রাট জহির উদ-দীন মুহাম্মাদ তথা হুমায়ূন ( ১৫০৮-১৫৫৬) এর পুত্র আকবরের দেখা পাই । উপন্যাসটিতে হুমায়ূন আহমেদ বৈরাম খাঁ ( ১৫০১-১৫৬১) কে হত্যার শেষ দৃশ্য দিয়ে উপন্যাসটি শেষ করেন । তাতে দেখা যায় আকবরের নির্দেশেই বৈরাম খাঁ নিহত হচ্ছেন । ইতিহাসে এমন হত্যাকা- কতভাবে হয়েছে তা ইতিহাস যারা পাঠ করেন তারা মাত্রই ভালোভাবে জানেন । আবুল ফজল নিহত হন আকবর পুত্র শেখ সেলিম তথা জাহাঙ্গীর (১৫৬৯-১৬২৭) এর নির্দেশে দেন ।
আবুল ফজল ধর্ম নিয়ে কীধরনের চিন্তা করতেন এবং রাষ্ট্রপরিচালনার বিষয়ে কী ভাবতেন তার বিশ্লেষণ দিতে গিয়ে আজরা আলাভি তার এই গবেষণা কর্মকে চারটি অধ্যায়ে ভাগ করেছেন । যেমন- ১.পরিবার ও সামাজিক পরিবেশ, ২.সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি, ৩.ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি এবং সর্বশেষ অধ্যায়টি হলো - ৪.সমাজের উপর প্রভাব ।
সমাজ বিজ্ঞানের ভাষায় পরিবার হলো রাষ্ট্রের প্রাথমিক একক । যেখানে একজন মানুষের মৌলভিত্তি গড়ে ওঠে । পরিবারের ভালো-মন্দ মানুষের মানসিক এবং শারীরিক গঠনে ভূমিকা রাখে । আবুল ফজলের জীবনেও তাঁর পরিবারের ভূমিকা রয়েছে । পিতার আদর্শকে তিনি লালন করতেন , তার চারিত্রিক গঠনে পিতা শেখ মুবারাক এর জীবনের বয়ান গবেষক বর্ণনা দিয়েছেন ফজলের আত্মজবান থেকে । তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন আজরা আলাভি এভাবে ‘এটা উল্লেখ্য যে, আবুল ফজলের ছিল অত্যন্ত সুবিস্তৃত যা তাকে সমালোচনাধর্মী দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে সাহায্যে করে । তিনি বলেন,‘‘[তার পিতার] অত্যন্ত মহিমান্বিত চেতনাধারার অনুগ্রহে প্লেটোবাদীদের গূঢ় রহস্য, সুফিদের বিশাল রতœভা-ার এবং অ্যারিস্টটল পন্থিদের বিস্ময়কর বীক্ষণসমূহ আমার দ্বারা অর্জিত হয়েছিল ।’’ ( ৪১) তাতে করে আবুল ফজলের চিন্তার ধরনটা ধরাপড়ে ।
সমাজ সম্পর্কে আবুল ফজল কী ভাবতেন কিংবা কেমন করে ভাবতেন ? আজরা এর উত্তরে তিনটি ভিত্তি দিয়েছেন-১. সকল মানুষ ভাই ভাই; ২. হিন্দু এবং মুসলমানদের মধ্যে একটি মৌলিক সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য আছে; এবং ৩. ধর্মীয় বিভেদ দ্বারা সমাজের মৌলিক সমপ্রকৃতিকে বিভাজিত করা উচিত নয় । এই হলো মোটাদাগে সমাজসম্পর্কে আবুল ফজলের ভাবনা । এছাড়াও তাঁর আরও বিস্তারিত সমাজ সম্পর্কিত ভাবনা বইটির ভিতরে পাওয়া যাবে ।
স¤্রাটের ভাবনা যে আবুল ফজলের ভাবনাকে প্রভাবিত করেছে সেটি যেমন সত্য , স¤্রাটকেও আবুল ফজলের ভাবনাও প্রভাবিত করেছে । যেমন-আকবর বলতেন, ‘‘ বহিরাঙ্গিক প্রার্থনা যাকে তারা একটি নতুন স্বর্গীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে আখ্যায়িত করতে চায়, এটা আসলে তন্দ্রাচ্ছন্নদের জাগানোর জন্য, অন্যথায় আল্লার প্রশংসা মূলত হৃদয় থেকে আসে শরীর থেকে নয়।’’ আবুল ফজল এই মন্তব্যের কার্যকারিতার উপর পুরোপুরি বিশ্বাস করতেন । (৬৮)
শেষ অধ্যায়ে সমাজের উপর প্রভাব নিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন , আজরা আলাভি । তাতে তৎকালীন দরবারের আবুল ফজলের ব্যক্তিত্বের প্রভাব যে রয়েছে তার বর্ণনা । মুঘল সা¤্রাজ্যের অন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের প্রভাবিত করতে তিনি দৃষ্টান্ত উপস্থান করতেন - যেমন শেখ ‘আলা-উদ্-দৌলা সিমনানি’র স্বপ্ন এর কথা বলতেন । তাতে করে সাধারণত কাজ হত । আবুল ফজলের নিজস্ব মতামত ছিল । আর সেই নিজস্ব মতামত প্রদানের জন্য জীবনের প্রথম ভাগে তাঁকে বয়তে হয়েছে নানা যাতনা । এমন যাতনার শিকার প্রতিটি শতাব্দীর মুক্তচিন্তার অগ্রনায়কদের সইতে হয়েছে বলেই , আমরা বিংশ শতাব্দীর নাগরিক কবি শামসুর রাহমানের ( ১৯২৯-২০০৬) বলছেন-
প্রভু, শোনো, এই অধমকে যদি ধরাধমে পাঠালেই
তবে কেন হায় করলে না তুমি তোতাপাখি আমাকেই ?
দাঁড়ে ব’সে ব’সে বিজ্ঞের মতো নাড়তাম লেজখানি,
তীক্ষè আদুরে ঠোঁটে দিয়ে বেশ খুঁটতাম দানাপানি ।
মিলতো সুযোগ বদ্ধ খাঁচায় বাধা বুলি কুড়োবার ,
বইতে হতো না নিজস্ব কথা বলবার গুরুভার ।
আবুল ফজলকে তাঁর কথার গুরুভার বহন করতে হয়েছে । নিজস্ব চিন্তা দিয়ে মধ্যযুগ থেকে বের করিয়ে নিয়ে আনতে চেয়েছেন তাঁর সমাজ এবং রাষ্ট্রকে । তাঁর এই উদ্যোগের মধ্যদিয়ে মধ্যযুগের ভারতবর্ষ অনেকমাত্রায় অসাম্প্রদায়িক হয়ে উঠেছিল । এর ফলে লোকায়ত চিন্তার দরজা খুলতে সাধারণের মনে সাহস সঞ্চারিত হয়েছিল ।
ইতিহাসের জ্ঞান ছাড়া যেকোন বিদ্যাশৃঙ্খলের জ্ঞান পঙ্গু। সবধরনের বিদ্যাচর্চা কোন না কোনোভাবে আসলে ইতিহাস চর্চারই অংশ । এই বই সেই অর্থে , রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইসলামের ইতিহাস , সমাজ বিজ্ঞান, ইতিহাস , আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের কাজে আসবে বলে মনে হয়, ইতিহাস সংক্রান্ত জ্ঞানলাভের মাধ্যমে। পাঠক আশা করি , মাহবুব বোরহান ( প্রফেসর ড. মাহবুব হোসেন ) এর প্রাঞ্জল অনুবাদ পাঠ করলে আবুল ফজলের ভাবনার জগৎ সম্পর্কে জানতে পারবেন এবং মুঘল সা¤্রাজ্যকে জানতে আরও আগ্রহী হয়ে উঠবে । অনুবাদক মাহবুব বোরহানকে এমন একটি সুন্দর বই অনুবাদ করার জন্য মুবারকবাদ জানাই । আশা করবো তাঁর এই বই পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করবে ।
লেখক - গবেষক এবং শিক্ষক
বইয়ের নাম : আবুল ফজলের ধর্ম ও সমাজ ভাবনা
মূললেখক : আজরা আলাভি ; অনুবাদক: মাহবুব বোরহান
প্রকাশন: দাঁড়কাক ; সময়কাল : ফেব্রুয়ারি, ২০২০
বিনিময়: ২৫০ টাকা ; পৃষ্ঠা সংখ্যা: ৯৬
ঐতিহাসিকভাবে আবুল ফজল ভারতবর্ষের ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আছেন । হুমায়ূন আহমেদের ( ১৯৪৮-২০১২) এর লেখা বাদশা নামদার ( ২০১১) পড়তে গিয়ে সর্বশেষে স¤্রাট জহির উদ-দীন মুহাম্মাদ তথা হুমায়ূন ( ১৫০৮-১৫৫৬) এর পুত্র আকবরের দেখা পাই । উপন্যাসটিতে হুমায়ূন আহমেদ বৈরাম খাঁ ( ১৫০১-১৫৬১) কে হত্যার শেষ দৃশ্য দিয়ে উপন্যাসটি শেষ করেন । তাতে দেখা যায় আকবরের নির্দেশেই বৈরাম খাঁ নিহত হচ্ছেন । ইতিহাসে এমন হত্যাকা- কতভাবে হয়েছে তা ইতিহাস যারা পাঠ করেন তারা মাত্রই ভালোভাবে জানেন । আবুল ফজল নিহত হন আকবর পুত্র শেখ সেলিম তথা জাহাঙ্গীর (১৫৬৯-১৬২৭) এর নির্দেশে দেন ।
আবুল ফজল ধর্ম নিয়ে কীধরনের চিন্তা করতেন এবং রাষ্ট্রপরিচালনার বিষয়ে কী ভাবতেন তার বিশ্লেষণ দিতে গিয়ে আজরা আলাভি তার এই গবেষণা কর্মকে চারটি অধ্যায়ে ভাগ করেছেন । যেমন- ১.পরিবার ও সামাজিক পরিবেশ, ২.সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি, ৩.ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি এবং সর্বশেষ অধ্যায়টি হলো - ৪.সমাজের উপর প্রভাব ।
সমাজ বিজ্ঞানের ভাষায় পরিবার হলো রাষ্ট্রের প্রাথমিক একক । যেখানে একজন মানুষের মৌলভিত্তি গড়ে ওঠে । পরিবারের ভালো-মন্দ মানুষের মানসিক এবং শারীরিক গঠনে ভূমিকা রাখে । আবুল ফজলের জীবনেও তাঁর পরিবারের ভূমিকা রয়েছে । পিতার আদর্শকে তিনি লালন করতেন , তার চারিত্রিক গঠনে পিতা শেখ মুবারাক এর জীবনের বয়ান গবেষক বর্ণনা দিয়েছেন ফজলের আত্মজবান থেকে । তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন আজরা আলাভি এভাবে ‘এটা উল্লেখ্য যে, আবুল ফজলের ছিল অত্যন্ত সুবিস্তৃত যা তাকে সমালোচনাধর্মী দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে সাহায্যে করে । তিনি বলেন,‘‘[তার পিতার] অত্যন্ত মহিমান্বিত চেতনাধারার অনুগ্রহে প্লেটোবাদীদের গূঢ় রহস্য, সুফিদের বিশাল রতœভা-ার এবং অ্যারিস্টটল পন্থিদের বিস্ময়কর বীক্ষণসমূহ আমার দ্বারা অর্জিত হয়েছিল ।’’ ( ৪১) তাতে করে আবুল ফজলের চিন্তার ধরনটা ধরাপড়ে ।
সমাজ সম্পর্কে আবুল ফজল কী ভাবতেন কিংবা কেমন করে ভাবতেন ? আজরা এর উত্তরে তিনটি ভিত্তি দিয়েছেন-১. সকল মানুষ ভাই ভাই; ২. হিন্দু এবং মুসলমানদের মধ্যে একটি মৌলিক সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য আছে; এবং ৩. ধর্মীয় বিভেদ দ্বারা সমাজের মৌলিক সমপ্রকৃতিকে বিভাজিত করা উচিত নয় । এই হলো মোটাদাগে সমাজসম্পর্কে আবুল ফজলের ভাবনা । এছাড়াও তাঁর আরও বিস্তারিত সমাজ সম্পর্কিত ভাবনা বইটির ভিতরে পাওয়া যাবে ।
স¤্রাটের ভাবনা যে আবুল ফজলের ভাবনাকে প্রভাবিত করেছে সেটি যেমন সত্য , স¤্রাটকেও আবুল ফজলের ভাবনাও প্রভাবিত করেছে । যেমন-আকবর বলতেন, ‘‘ বহিরাঙ্গিক প্রার্থনা যাকে তারা একটি নতুন স্বর্গীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে আখ্যায়িত করতে চায়, এটা আসলে তন্দ্রাচ্ছন্নদের জাগানোর জন্য, অন্যথায় আল্লার প্রশংসা মূলত হৃদয় থেকে আসে শরীর থেকে নয়।’’ আবুল ফজল এই মন্তব্যের কার্যকারিতার উপর পুরোপুরি বিশ্বাস করতেন । (৬৮)
শেষ অধ্যায়ে সমাজের উপর প্রভাব নিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন , আজরা আলাভি । তাতে তৎকালীন দরবারের আবুল ফজলের ব্যক্তিত্বের প্রভাব যে রয়েছে তার বর্ণনা । মুঘল সা¤্রাজ্যের অন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের প্রভাবিত করতে তিনি দৃষ্টান্ত উপস্থান করতেন - যেমন শেখ ‘আলা-উদ্-দৌলা সিমনানি’র স্বপ্ন এর কথা বলতেন । তাতে করে সাধারণত কাজ হত । আবুল ফজলের নিজস্ব মতামত ছিল । আর সেই নিজস্ব মতামত প্রদানের জন্য জীবনের প্রথম ভাগে তাঁকে বয়তে হয়েছে নানা যাতনা । এমন যাতনার শিকার প্রতিটি শতাব্দীর মুক্তচিন্তার অগ্রনায়কদের সইতে হয়েছে বলেই , আমরা বিংশ শতাব্দীর নাগরিক কবি শামসুর রাহমানের ( ১৯২৯-২০০৬) বলছেন-
প্রভু, শোনো, এই অধমকে যদি ধরাধমে পাঠালেই
তবে কেন হায় করলে না তুমি তোতাপাখি আমাকেই ?
দাঁড়ে ব’সে ব’সে বিজ্ঞের মতো নাড়তাম লেজখানি,
তীক্ষè আদুরে ঠোঁটে দিয়ে বেশ খুঁটতাম দানাপানি ।
মিলতো সুযোগ বদ্ধ খাঁচায় বাধা বুলি কুড়োবার ,
বইতে হতো না নিজস্ব কথা বলবার গুরুভার ।
আবুল ফজলকে তাঁর কথার গুরুভার বহন করতে হয়েছে । নিজস্ব চিন্তা দিয়ে মধ্যযুগ থেকে বের করিয়ে নিয়ে আনতে চেয়েছেন তাঁর সমাজ এবং রাষ্ট্রকে । তাঁর এই উদ্যোগের মধ্যদিয়ে মধ্যযুগের ভারতবর্ষ অনেকমাত্রায় অসাম্প্রদায়িক হয়ে উঠেছিল । এর ফলে লোকায়ত চিন্তার দরজা খুলতে সাধারণের মনে সাহস সঞ্চারিত হয়েছিল ।
ইতিহাসের জ্ঞান ছাড়া যেকোন বিদ্যাশৃঙ্খলের জ্ঞান পঙ্গু। সবধরনের বিদ্যাচর্চা কোন না কোনোভাবে আসলে ইতিহাস চর্চারই অংশ । এই বই সেই অর্থে , রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইসলামের ইতিহাস , সমাজ বিজ্ঞান, ইতিহাস , আইন বিভাগের শিক্ষার্থীদের কাজে আসবে বলে মনে হয়, ইতিহাস সংক্রান্ত জ্ঞানলাভের মাধ্যমে। পাঠক আশা করি , মাহবুব বোরহান ( প্রফেসর ড. মাহবুব হোসেন ) এর প্রাঞ্জল অনুবাদ পাঠ করলে আবুল ফজলের ভাবনার জগৎ সম্পর্কে জানতে পারবেন এবং মুঘল সা¤্রাজ্যকে জানতে আরও আগ্রহী হয়ে উঠবে । অনুবাদক মাহবুব বোরহানকে এমন একটি সুন্দর বই অনুবাদ করার জন্য মুবারকবাদ জানাই । আশা করবো তাঁর এই বই পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করবে ।
লেখক - গবেষক এবং শিক্ষক
jafourjkkniu@gmail.com
আমাদের ইউটিউব চ্যালেন সাবস্কাইব করতে ক্লিক করুন https://bit.ly/2Oe737t
কনটেন্ট চুরি আপনার মেধাকে অলস করে তুলে, আমরা এ নিন্দনীয় কাজকে নিরুৎসাহিত করি। এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।