![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEj0u5NWSVURNoHnh2vnsTP9oeTpKGT44SlxS7kEaGKmk610zv3NmQ3f9NsJlrh-U3jGC_esGAgxxBYNgLqFdoMO1AtQniHM4L7NNFLW9ngox-v1BsI1EEgXJeauDvV2A7NsATjijU7VDSk/s640/Muktomat+Graphics_01+copy.jpg)
লোকচিকিৎসা মূলত প্রকাশিত নিয়মতান্ত্রিক পাঠ্যপুস্তক অথবা প্রাতিষ্ঠানিক কিংবা রোগ সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ এর বাইরে মৌখিক-ঐতিহ্য নির্ভর বিশ্বাস ও ব্যবহারিক চিন্তার ওপর গড়ে ওঠা ব্যবস্থা । কারণ লোকচিকিৎসা - সাধারণত পরিচিত যেন ঐতিহ্য ,স্বদেশীয় , অথবা গোষ্ঠীগত চিকিৎসা – এটি প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং সরকারি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা যেমন- নার্স, বৈদ্য এবং অন্যান্য অনুমোদনকৃত স্বাস্থ্য সেবা সংক্রান্ত পেশার সাপেক্ষে গড়ে ওঠা ব্যবস্থা । যেটি প্রায়শই , প্রান্তিক বলে গণ্য হয়, গণ্য হয় অনেকটা হাতুড়ে চিকিৎসার সঙ্গে , অথবা স্থানীয় অতি সাধারণ ব্যবস্থার সঙ্গে তুলনা করা হয় । এমন অবস্থার প্রেক্ষিতে , একজন ফোকলোরবিদ , একজন নৃতাত্ত্বিক , নৃউদ্ভিদবিজ্ঞানী*, চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ এবং অন্যান্য গবেষকের মাঠগবেষণার নথিবদ্ধ উপাদান , লোক ঔষধ বহু দূরপ্রভাব বিস্তৃত, এই বর্তমান বাংলাদেশে । এটি নিয়ে আসে বৈচিত্র, এই জটিল এবং উচ্চতর বিচিত্র চিকিৎসা ব্যবস্থায় ।
লোকচিকিৎসার একটি স্বাতন্ত্র্যসূচক বৈশিষ্ট্য হলো – সংখ্যাধিক্য পদ্ধতি । এই ধরনকে
একত্রে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়:
ক. বসতবাড়িতে প্রস্তুত ঔষধ,
খ. লতাপাতার
চিকিৎসা এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক উপায়ে চিকিৎসা,
গ. যাদুমন্ত্রভিত্তিক
চিকিৎসা ।
এই তিনধরনের
চিকিৎসাপদ্ধতির ভিতর সবচেয়ে পুরাতন ও সহজ প্রস্তুতি এবং ব্যবহার হলো
বসতবাড়ি প্রস্তুত চিকিৎসাপদ্ধতি । বসতবাড়িপ্রস্তুত চিকিৎসাপদ্ধতির জন্য
প্রয়োজন হয় অতি অল্প পরিমাণ বিশেষজ্ঞ জ্ঞান অথবা অভিজ্ঞতা। বেশিভাগ সাধারণ
রোগ ও আঘাত যেমন- রান্না ঘরের পাওয়া আঘাত, পথ চলতে চলতে আঘাত ইত্যাদি
থেকে প্রতিকার পাওয়ার ক্ষেত্রে লোকচিকিৎসা প্রধানত ব্যবহার করা হয় ।
কিছু লোকচিকিৎসা গ্রহণ করা হয় – প্রবাদ বাক্য থেকে , একটি পারিবারিক প্রবাদ হলো এমন – ‘ বেল খেয়ে খায় পানি, / জির বলে মরলাম আমি ।‘ ( বেল খাওয়ার পর পানি পান কৃমিনাশক হিসেবে কাজ করে । ) মাঝে মাঝে কিছু বিশেষ ব্যবহারিক পরামর্শ থাকে যেমন – হাল্কা গরম পানির সাথে লবণ কুলকুচা করলে আরাম পাওয়া যায় দাঁতের ব্যথা জনিত উপদ্রব থেকে । মৌমাছির দংশনের ব্যথা কমানোর জন্য চুনের ব্যবহার , পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার ক্ষেত্রে কেরোসিন তেলের ব্যবহার ।
গৃহপ্রস্তুত চিকিৎসা পদ্ধতি , ন্যাচারোপ্যাথিক বা প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায়
অনেক বেশিমাত্রায় জটিল এবং প্রাচীন , যেখানে গৃহপ্রস্তুত চিকিৎসার ক্ষেত্রে
ব্যবহার করার হয় পশুপাখি , খনিজপদার্থ ও উদ্ভিদ ,সেখানে ন্যাচারোপ্যাথিক
শরীর নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে চিকিৎসা দেয় হয় । উদ্ভিদ নির্ভর প্রতিষেধক ও
চিকিৎসা পদ্ধতিকে হারবালচিকিৎসা । বাংলাদেশের লোকচিকিৎসা ব্যবস্থায় হারবাল
চিকিৎসা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে । ভেষজচিকিৎসা ব্যাপক ও অবিরত
পরিবর্তনশীল , আসবাবের মত করে উপাদানগুলি ঝুলিয়ে রাখা হয় ,মলম, চা-জাতীয়
পানীয় এবং অন্যান্য সিদ্ধপদ্ধতি ব্যবহার করা হয় , অসুস্থতা এবং আঘাত থেকে
রক্ষার জন্য, ঠাণ্ডা-সর্দিকাশি থেকে শুরু করে হার হার্ট সমস্যা
,ডায়াবেটিক্স এবং ক্যান্সার । একটি নির্দিষ্ট উদ্ভিদ, যেমন- ঘৃতকুমারী বা
অ্যালোভেরা ( Aloe vera) । অ্যালোভেরার একটি ব্যবহার হলো- পুড়ে যাওয়া
জায়গায় মলম হিসেবে ব্যবহার করা হয় । আবার একটি উদ্ভিদের বহুমাত্রিক
ব্যবহারও রয়েছে ।যেমন- কালমেঘ বা আলুই তেমন
একটি উদ্ভিদ । কালমেঘ এর পাতা দিয়ে পচা ক্ষত পরিষ্কার করা হয় , এর রস দিয়ে
কৃমিনাশক , রক্ত আমাশয় দূর করে , Cancer বা কর্কট রোগ প্রতিরোধে কার্যকর
ভূমিকা রাখে ইত্যাদি
। বাংলাদেশ ন্যাশনাল হারবেরিয়াম সর্বপ্রথম এদেশের ১৯২টি ভেষজ উদ্ভিদ
প্রজাতির ব্যবহার সম্বলিত একটি তালিকা প্রণয়ন করে । বাংলাদেশের পার্বত্য
চট্টগ্রাম অঞ্চলের ‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ‘দের ব্যবহৃত ভেষজ উদ্ভিদের তালিকা
সমৃদ্ধ সচিত্র বই প্রকাশ
করেছে । এছাড়াও বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ক্ষেত্রসমীক্ষা
পরিচালন করে দেখা গিয়ে যে , বাংলাদেশের রংপুর অঞ্চলের ৩০% মানুষ এখন
লোকচিকিৎসা গ্রহণ করে থাকে । ১৫০ জন চিকিৎসকের ভিতর ৫৭ জন লোকপ্রজ্ঞা
নির্ভর লোকচিকিৎসক । প্রায় ৩০০০ তালিকা বহির্ভূত কবিরাজ রয়েছে ।বাংলাদেশ
জাতীয় হারবেরিয়াম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৯৭০ সালে ।
বর্তমানে যে সকল লোকচিকিৎসক মাঠপর্যায়ে এখনও এই চিকিৎসাপদ্ধতির চর্চা করছেন তারা প্রতিনিয়ত নানাধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন । এই ঐতিহ্য ক্রমশ নিম্নমুখী অবস্থায় রয়েছে,কারণ প্রাচীন সমস্ত গাছপালা কমে যাচ্ছে । একটি দেশের চাহিদার কথা মাথায় রেখে এই নিম্নমুখী প্রবাহকে রোধ করতে হবে , যেমনটা করে ভালো খাবারের কথা বাড়ানোর কথা ভাবছি ।
লোকচিকিৎসার
অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কাঠামো হলো জাদুকরী চিকিৎসাপদ্ধতি , যেটি
হোমিওপ্যাথিক , সংক্রামক জাদু এবং দেহ কেন্দ্রিক চিকিৎসাপদ্ধতি । জাদুকরী
চিকিৎসাপদ্ধতি – যদিও এই পদ্ধতিতে মাঝে মাঝে
গৃহপ্রস্তুত চিকিৎসা অথবা ভেষজও চিকিৎসার সহায়তাগ্রহণ করা হয় ; প্রকৃতপক্ষে
এটি কোন বস্তুগত উপাদানের উপর নির্ভরশীল কোন চিকিৎসাপদ্ধতি না । এই
চিকিৎসা অনেক বেশিমাত্রায় যে চর্চায় যুক্ত মৌখিক মন্ত্র, আচারগত
কার্যকারণ । এছাড়াও অলৌকিক শক্তির ওপরও – রোগনির্ণয়, অপসারণ, স্থানান্তর,
বিনিময়তা কিংবা প্রয়োগ নির্ভর করে । লোকচিকিৎসার বিশ্বাস অনুযায়ী যে বিষয়টি
প্রচলিত তা হলো মন্ত্র উচ্চারণের মাধ্যমে আরোগ্য লাভ করা যায় ।
লোকচিকিৎসক মন্ত্র উচ্চারণ করে এবং রোগীর দিকে ফুঁ দেয়। অনেক বেশিমাত্রায়
এটি রূপক যে , কীভাবে মন্ত্র উচ্চারণ এবং অন্যান্য অনুষঙ্গী প্রথাগত আচারের
মাধ্যমে আরোগ্য লাভে সহায়তা প্রদান করে থাকে ।
কুহক
ও ধর্মীয় ঐতিহ্য মতে , আগুনের ব্যবহার থাকে চোখে পড়ার মত । বৈদ্য মন্ত্র
উচ্চারণ করে থাকে যা বেশ দূর্বোধ্য এবং ধারণাতীত রোগী ও আশপাশের লোকজনের
কাছে ।ঐশ্বরিক শক্তি রোগীর আরোগ্য বিধানে ব্যবহৃত হয় ।
যখন
কোন অসুস্থতা অনুমিত হয় যে , এটি কোন অস্বাভাবিক বা জাদুকরী কারণে হয়েছে
তখন অবশ্য লোকচিকিৎসায় বিপরীতমুখী জাদুকরী চিকিৎসার সহায়তা গ্রহণ করা হয় ।
উদাহরণত যারা বিশ্বাস করে যে , এটি কোন শয়তানের ভূমিকা রয়েছে যে,
সত্যিকার অর্থে কোন শক্তি শারীরিক এবং মানসিকভাবে ক্ষতি করছে কুদৃষ্টির
মাধ্যমে – তাহলে বাহুতে তাবিজ ব্যবহার করা হয় যেন , তাতে প্রতীকী অর্থে
শক্তি বিচ্ছুরিত হয় অথবা রহস্যভেদ করে অশুভ শক্তিকে মোকাবিলা করতে পারে ।
অন্য অর্থে যাকে আমরা ‘কুনজর‘ বলি তার হাত থেকে রক্ষা করতে পারে ।এমন
সর্তকতা সত্ত্বেও যদি কেউ খারাপ লোকের কুনজরে পড়ে , তাহলে অন্য জাদুকরী
পদ্ধতির আশ্রয় গ্রহণ করতে হয় , দোয়া এবং শুভ আর্শিবাদ করা হয় কুদৃষ্টি বা
ক্ষতিকর দৃষ্টি এড়ানোর জন্য ,সাথে চলে নানান ধরনের পরীক্ষা এবং আরোগ্যমূলক
আচার-অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয় পরিবারের অথবা গোত্রের কোন সদেস্যের মাধ্যমে
যার শক্তি খানিকটা ঐ ক্ষতিকর শক্তির কাছাকাছি ।সংস্কৃতিতে এই অতিপ্রাকৃত
শক্তির যেমন কুদৃষ্টির মত অনেক খারাপ উপাদান রয়েছে যা ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে
। সত্যিকার অর্থে লোকচিকিৎসা বিশেষেভাবে একটি জটিল প্রক্রিয়া
।অংশগ্রহণমূলক এই ঐতিহ্যগুলির
চর্চা খুব সর্তকতার সঙ্গে পালন করা হয় । যেমন- কীভাবে নখ কাঁটতে হয়, চুল ,
কাপড়ের টুকরা অথবা অন্য জিনিস স্বাভাবিক অবস্থায়, যেটি আনা হয় সেই ব্যক্তির কাছে যে ব্যক্তি ঐ ব্যক্তির ক্ষতি সাধন করবে অথবা কবিরাজ অধিক শক্তি অর্জন করবে ।এমনকি এই সতর্কীকরণমূলক
অনুমান প্রভাবিত করে এবং রক্ষা করে অসুস্থতা থেকে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার
মাধ্যমে । অনেক সময় নানা রকমের আচার থেকে দেখা যায় যে এখানে রোগীর পরিবর্তে
পুতুল কিংবা গিট ব্যবহার করা হয় এবং তাতেই চিকিৎসা
করা হয় । অপ্রাকৃত অসুস্থতার কারণ ও লক্ষণ খুঁজে পাওয়া অনেক বেশি মাত্রায়
জটিল , সে তুলনায় প্রাকৃতিক অসুস্থতার কারণ খুঁজে পাওয়া যেমন- অবসাদ,
বিষণ্নতা, অসাড়তা, চামড়া ফুসকুড়ি বেশ সহজ ।যখন কোন অবস্থায় গৃহপ্রস্তুত
চিকিৎসা , হারবাল চিকিৎসা কিংবা ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্রেও আর কাজ করে না
তখন অতিপ্রাকৃত শক্তি সম্পন্ন চিকিৎসক অর্থাৎ ওঝার সম্মুখীন হতে হয়
।লোকচিকিৎসক রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে কোন একক কারণ নিশ্চিত করতে অভ্যস্ত নন
।তার চেয়ে বরং ; নানানধর্মী উপাদানের কথা বলেন , যেখানে সকল বয়সের পুরুষ
এবং নারীর থাকেন, সকল পেশা, শ্রেণি এবং সংস্কৃতির কথা থাকে । তারা মাঝেমাঝে
চিকিৎসাসংক্রান্ত পরামর্শ প্রদান করে থাকেন , যারা এই পরামর্শ প্রদান করে তারা সংখ্যায় অল্প এবং তাদের তেমন কোন চিকিৎসক হিসেবে পরিচয় থাকে না । কেউ কেউ অবশ্য ভালোভাবেই চেনে তদের ‘ওঝা‘ হিসেবে , এর অবশ্য চিকিৎসকের বাইরে
গোত্রের লোক ।কেউ কেউ তাদের স্বর্গীয় ক্ষমতা ধারণকারী বলে মনে করে থাকে ।
তারা জন্ম-মৃত্যুর মাঝে যে ঐতিহ্যগত পথ চলা তার বাহক হিসেবে কাজ করে থাকে।
অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী বলে অনেক লোকজন বিশ্বাস করে । সাধারণের ভিতর এমন
বিশ্বাসও রয়েছে যে , এই চিকিৎসকরা অনেকেই
শয়তান কিংবা খারাপ শক্তির মাধ্যমে জাদুকরী বিদ্যা অর্জন করেছে। তাদের ভিতর
কেউ হন বিশেষজ্ঞ । যেমন – কেউ হয়ত রক্তপাত বন্ধ করতে পারেন । এবিষয়টি
হারবাল চিকিৎসায় বেশ ভালোভাবে চোখে পড়ে। লোকচিকিৎসার তিন শাখায় বিষয়টি
পরিলক্ষিত হয় ।
গুরুত্বপূর্ণ
কথা হলো লোকচিকিৎসকের সচেতনা নিয়ে নানামাত্রিক অধ্যয়ন সম্ভব হতে পারে এবং
হচ্ছে, কেননা একজন লোকচিকিৎসকের ভালো একটি ভূমিকা রয়েছে নির্দিষ্ট এলাকার
উন্নয়নের ক্ষেত্রে । প্রতিটি এলাকায় একজন লোকচিকিৎসক অত্যন্ত সম্মানিত
ব্যক্তি। লোকচিকিৎসকগণ যেহেতু পেশাগত চিকিৎসক নন বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ,
সেক্ষেত্রে তার অন্য পেশাকেও সম্মানের সঙ্গে দেখা হয় । বাংলাদেশে
লোকচিকিৎসকের বাড়িগুলি ঐ এলাকায় বেশ কদরপূর্ণ ।
একটি
বিষয় মনে রাখা দরকার যে, লোকচিকিৎসা সাংস্কৃতিক বিশ্বাস এবং চর্চার অংশ
কিন্তু তা আসলে প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসা ব্যবস্থার জায়গা দখল করে না। বরং এটি
টিকে থাকবে অনেকটা বিকল্প চিকিৎসাব্যবস্থা হিসেবে । যেমনটা আছে - আকুপাংচার
।
বাস্তবিক ক্ষেত্রে যে অবস্থা দাঁড়িয়ে তাতে এটি বেশ জটিল আকার ধারণ করেছে । অন্যতম একটি কারণ হলো –সারদেশেই
চিকিৎসকে ঘাটতি রয়েছে ; বিশেষত প্রান্তিক এলাকায় যেখানে জনসংখ্যা
তুলনামূলক ভাবে কম ; বিশেষত ব্যক্তিগত চিকিৎসা চর্চার সুযোগ কম এবং যেখানে
হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিক পাশের ইউনিয়ন
পরিষদে রয়েছে । এমন অবস্থায় বিষয়টি আশ্চর্য হওয়ার মত না যে , সাধারণ
মানুষ লোকচিকিৎসকের কাছে ফিরতে বাধ্য , কেননা ডাক্তার ডাকলে যথা সময়ে পাওয়া
বেশ দুষ্কর হয়ে উঠে। এমনকি যখন প্রাতিষ্ঠানিক স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য হয়ে
উঠে- কিছু কিছু মানুষ এটা নিতে অসামর্থ্য প্রকাশ করে । সমস্যা এই
যে , প্রাতিষ্ঠানিক চিকিৎসার হাসপাতাল চিকিৎসা , ওষুধপত্র এবং অন্যান্য
খরচ সাধারণ মানুষের কাছে বেশ কঠিন হয়ে পড়ে । বিপরীতে রয়েছে, হারবাল
চিকিৎসার খরচ কম হওয়া এবং জাদুকরী-ধর্মীয় চিকিৎসকদের কঠোর বিধি-নিষেধ
কোনধরনের অর্থ গ্রহণের ক্ষেত্রে ,এমনকি ধন্যবাদ গ্রহণ পর্যন্ত না । তারা
সৃষ্টিকর্তার কাছে থেকে এর প্রতিদান পাবেন বলে তাদের বিশ্বাস । কারণ অনেক
সময় চিকিৎসক রোগীর পরিবারের সদস্য কিংবা গোষ্ঠীর সদস্য হন । তাছাড়া চিকিৎসা
সমস্ত কাজ পারিবারিক পরিবেশ কিংবা কাজের জায়গায় হয়ে থাকে । লোকচিকিৎসকের
সঙ্গে রোগীর সম্পর্ক অনেক বেশিমাত্রায় নৈকট্যময় এবং কম কষ্টদায়ক হাসপাতালের
তুলনায় । রোগী কিছুটা সময় লোকচিকিৎসকের বাড়িতে কিছু সময় অবস্থান করে যা
অনেকাংশে রোগীর নিজস্ব প্রতিবেশের অংশ , যেটি রোগীর মানসিক শান্তির পক্ষে ইতিবাচক বিষয়। এরপর , নির্দিষ্ট অসুস্থতার জন্য আক্রান্ত ব্যক্তি লোকচিকিৎসকের কাছেই যায় কারণ তারা প্রাতিষ্ঠানিক চিকিৎসার জন্য ভাবে না । সংস্কৃতি অনুধাবন এই যে, তাতে করে প্রকাশিত হয় অসুস্থতা এবং রোগ দুটি বিষয় সাংস্কৃতিক অন্বয়ে বাঁধা ।
লোকচিকিৎসার বৈশিষ্ট্য এই তাতে স্বতন্ত্র এবং গোষ্ঠীগত স্বাস্থ্য সেবার ব্যবস্থা সহজেই নথিবদ্ধ করা যায় । কিন্তু প্রশ্ন এবং তার উত্তর যথাযথ পাওয়া কঠিন হয়ে পরে যখন এই
চিকিৎসার নির্দিষ্ট কোন ধরন বা প্রক্রিয়া নিয়ে কথা উঠে না নানামাত্রিকা
প্রকাশ করে তখন বিষয়টি কঠিন হয়ে পড়ে চিকিৎসা বিষয়ক গবেষকদের জন্য ।
সেক্ষেত্রে যে সকল লোক গৃহপ্রস্তুত চিকিৎসা, হারবাল চিকিৎসা অথবা জাদুকরী
চিকিৎসাগ্রহণ করেছে তাদের অভিজ্ঞতা কিংবা চিকিৎসা প্রক্রিয়া সম্পর্কে অবহিত
হতে পারে গবেষকবৃন্দ । গবেষকদের জন্য বিষয়াটি জটিল হয়ে পড়ে বিশেষত
বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা গোষ্ঠীর জন্য, অন্য দিকে ,তারা কোন মূল্যবান সিদ্ধান্তে
উপস্থিত হতে পারে না সমগ্রপ্রক্রিয়া গবেষণাগারে পরীক্ষা ছাড়া যেটি
ক্লিনিক্যাল নিয়ন্ত্রণাধীন থাকে । মাঝে মাঝে বৈজ্ঞানিক গবেষকবৃন্দ
লোকবিশ্বাসের সঙ্গে একাত্মা প্রকাশ করে । অনেকটা ফক্সগ্লোব ফুলের মত ধীরে
ধীরে বাড়ে এমন প্রক্রিয়া মাধ্যমে । এ সময় গবেষকরা গোষ্ঠী হারবাল চিকিৎসকের
পরামর্শগ্রহণ করে থাকে এরপূর্বে ফার্মাকোলজিকাল পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয় ।
বিপরীতে , কিছু দীর্ঘ প্রক্রিয়ার লোকচিকিৎসা রয়েছে , কিডনীর সমস্যার জন্য
তার্পিন তেলের ব্যবহার ঝুঁকি জেনেও নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় ব্যবহার করা হয়
।অন্য চিকিৎসার ক্ষেত্রে চিকিৎসাবিজ্ঞান অমীমাংসিত । সাশাফার্স বা
sassafras গাছ খুবই জনপ্রিয় ভালো রক্ত পরিশোধক ওষুধ হিসেবে সেই ঔপনিবেশিক আমল থেকে , বর্তমান বিজ্ঞান গবেষণা বলছে যে এই
বৃক্ষের রয়েছে ক্যান্সার প্রতিরোধী প্রধান উপাদান কার্সিনোজেন নামক পদার্থ
। অনেক সমস্যা রয়েছে যা জাদু-ধর্মী বিশ্বাসের উপর দাঁড়িয়ে আছে ,
ঐতিহ্যগতভাবে গ্রহণযোগ্য হলেও তার কোন গবেষণাগার কিংবা ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা
কর হয় । সাধারণ মানুষ জন আগুনে পোড়ার কথা বলে , মৌখিকভাবে লোকচিকিৎসার
কর্মক্ষমতা সম্পর্কে যে , তাদের অভিজ্ঞতা রয়েছে যে , এই ব্যবস্থায় রোগ ভালো হয় , ব্যথা নাশ হয় খুব দ্রুত কিন্তু বৈজ্ঞানিকভাবে বিষয়টি প্রমাণ করার সুযোগ নেই । যদিও আগুন ক্ষত সৃষ্টির জন্য যথেষ্ট এবং দাগ রেখে যায় । কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ করে পারে হয়ত এই
দাগগুলি । যদিও চিকিৎসাবিজ্ঞান লোকচিকিৎসা কে স্বীকৃতি দেখ কিংবা
অব্যবহার্য বলে ঘোষণা করুক না কেন যে , নির্দিষ্ট লোকচিকিৎসা চর্চা
গুরুত্ব তেমন নেই
বলে । তারপরও বলতে হবে লোকচিকিৎসক এবং লোকচিকিৎসা ব্যবহারকারীগণের কাছে এর
আবেদন কিংবা বিশ্বাস এখন রয়েছে । যতক্ষণ পর্যন্ত না আধুনিক দুটি অবস্থা
চালু হয় ততদিন লোকচিকিৎসা সাড়ম্বরে চালু থাকবে – না সেটি বিকল্প ব্যবস্থা
নয় মূলধারার চিকিৎসা হিসেবে এবং জটিল পদ্ধতি হিসেবে এবং বহুমাত্রিক চিকিৎসা
ব্যবস্থার অংশ হিসেবে ।
জাফর জয়নাল
লেখক- গবেষক ও প্রাবন্ধিক
সহায়ক রচনার অসম্পূর্ণ ( সর্বার্থে ) তালিকা
১
. Jan Harold Brunvand ( edited by ) (1996) American Folklore : An
Encyclopedia ; Garland Publishing, Inc. New York and London .
২. খালিকুজ্জামান ইলিয়াস (অনুবাদ) (২০১৭) স্যার জেমস জর্জ ফ্রেজার-এর গোল্ডেন বাউ : মানুষের জাদুবিশ্বাসের ও ধর্মাচার বৃত্তান্ত । বিপিএল । ঢাকা
৩. ড. বরুণকুমার চক্রবর্তী (সম্পা.) (২০০৫) বঙ্গীয় লোকসংস্কৃতি কোষ । অপর্ণা বুক ডিস্ট্রিবিউটার্স । কলকাতা
৪. ত্রিশাল, ময়মনসিংহ -এর লোকচিকিৎসা বিষয়ক ক্ষেত্রসমীক্ষা -২০১৯
কনটেন্ট চুরি আপনার মেধাকে অলস করে তুলে, আমরা এ নিন্দনীয় কাজকে নিরুৎসাহিত করি। এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।