চাঁপাইনবাবগঞ্জটিভি : দলীয় মনোনয়ন পেতে আপনি কতটুকু আশাবাদী...
আবদুল কাদের : আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ অর্থাৎ নাচোল-গোমস্তাপুর- ভোলাহাট আসনে আমি একজন নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী। ছাত্রজীবন থেকেই আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। শিক্ষাজীবন শেষ করে একটি বেসরকারি কলেজে শিক্ষকতা পেশায় যোগদান করি। দলীয় কর্মকা-ের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত রয়েছি। প্রায় ১৫ বছর যাবৎ নাচোল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি। দলীয় সমর্থন নিয়ে ১নং কসবা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হই। বর্তমানে নাচোল উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান। অনেক দিন ধরেই রাজনৈতিক কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত রয়েছি এবং নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছি। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মাঠে কাজ করছি। এর আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন, পৌর নির্বাচন এমনকি জেলা পরিষদ নির্বাচনেও নেতাকর্মীদের একত্রিত করে নৌকার পক্ষে নিরলস কাজ করেছি। দেড় বছর ধরে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য নৌকার পক্ষে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছি। এজন্য আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমি একজন মনোনয়ন প্রত্যাশী। আমার আশা, জননেত্রী শেখ হাসিনা যদি মাঠপর্যায়ে খোঁজখবর ও তথ্য নেন তাহলে অবশ্যই আমি নৌকার কান্ডারি হিসেবে আমাকে দলীয় মনোনয়ন দেবেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জটিভি : আপনার কোন কোন কর্মকান্ড- মনোনয়ন পেতে ভূমিকা রাখবে...
আবদুল কাদের : ২০০৫ সালে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে আমি বিভিন্ন সময়ে দলীয় কর্মকান্ডগুলো উজ্জীবিত করার চেষ্টা করেছি। প্রতিটি দলীয় কর্মসূচি সফলভাবে সম্পন্ন করেছি এবং নেতাকর্মীদের এক জায়গায় করে সেগুলো পরিচালনা করার চেষ্টা করেছি। আমি শুধু নাচোলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকিনি, দলীয় কর্মকান্ডগুলো গোমস্তাপুর ও ভোলাহাট উপজেলায়ও ছড়িয়ে দেয়ার জন্য নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছি। মোটা দাগে বলতে পারি, বিগত দিনে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে অন্য উপজেলাতেও শতভাগ মাঠে নেমে কাজ করেছি। শুধু তাই নয়, এর আগের জাতীয় সংসদ এবং সদ্য জেলা পরিষদ নির্বাচনে তিন উপজেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছি। সেক্ষেত্রে আমি বলতে পারি যে, এ কাজের ওপর ভিত্তি করে দলের সভানেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে এবার দলীয় মনোনয়ন দেবেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জটিভি : আপনার প্রতি দলীয় নেতাকর্মীদের মনোভাব কেমন...
আবদুল কাদের : আজ অবধি আমার থানা কমিটির সদস্য ছাড়াও বিভিন্ন ওয়ার্ডে দলের অঙ্গসংগঠনের যেসব কমিটি রয়েছে তাদের এবং তৃণমূল পর্যায়ের সব নেতাকর্মীর সঙ্গে আমি সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলি। যদিও অন্যরা বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করেছে; কিন্তু আমি নাচোলের বুকে তা হতে দেইনি। তার প্রমাণ পৌরসভা নির্বাচনে এর আগে কখনো আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়ী হয়নি, উপজেলা নির্বাচনেও তাই। এজন্য বলি, দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আমার সুসম্পর্ক আছে বলেই উপজেলা নির্বাচনে নিজে যেমন জয়ী হয়েছি, তেমনি পৌরসভাতেও আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে পেরেছি। আমি মনে করি, এ সুসম্পর্ক আগামী নির্বাচনেও অব্যাহত থাকবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জটিভি : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলীয় কোন্দল কতটুকু দূর হতে পারে...
আবদুল কাদের : বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। আমাদের ৪৪ চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে এবার অনেক মনোনয়ন প্রত্যাশী। এজন্য নেতাকর্মীদের মধ্যে একটু বিভ্রান্তি থাকতেই পারে। কিন্তু একজনের নামে যখন নমিনেশন ঘোষণা হয়ে যাবে, তখন এ বিভ্রান্তি থাকবে বলে আমি মনে করি না। এ বিভ্রান্তি অবশ্যই আমরা দূর করবো। যারা মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন, তাদেরকে এক জায়গায় করে জননেত্রী শেখ হাসিনার যে নির্দেশনা; সে নির্দেশনা মোতাবেক আমরা কাজ করবো। আমি মনে করি, এ বিভেদ দূর করা সম্ভব হবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জটিভি : সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে কোন কাজগুলোকে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত...
আবদুল কাদের : আমি মনে করি, অনেকগুলো সমস্যা। তার মধ্যে আমাদের এ অঞ্চলের জন্য যে সমস্যাটি চিহ্নিত করতে পারি, সেটি হচ্ছে এখনো আমরা শতভাগ শিক্ষিত হতে পারিনি। শিক্ষা সেক্টরকে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে, এখানে যে ৭০ বা ৭১ ভাগ শিক্ষার হার, তাকে শতভাগে উন্নীত করার। আর বরেন্দ্র অঞ্চল হিসেবে আমাদের এলাকাটি খ্যাত। এখনো অনেক রাস্তা কাঁচা রয়ে গেছে। সেগুলো পাকাকরণে গুরুত্ব দেব। পাশাপাশি বলব, বরেন্দ্র অঞ্চল হিসেবে এখানকার মানুষের পানি একটা প্রধান সমস্যা। পানির সুব্যবস্থা নিশ্চিত করা। এখানে আদিবাসী সম্প্রদায় রয়েছে, তাদেরও গুরুত্ব দিতে হবে। সর্বোপরি আমি বলব, এ অঞ্চলের এক প্রান্তে আম চাষ, অন্য প্রান্তে ধান চাষ; কাজেই কৃষির ওপর নজর দিতে হবে। আমি মনে করি, চার-পাঁচটি বিষয়কে আমাদের বেশি গুরুত্ব দেয়া দরকার। জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে যদি নৌকা প্রতীক দেন এবং আমি যদি এমপি নির্বাচিত হতে পারি তবে এ বিষয়গুলোকে অবশ্যই গুরুত্বসহকারে দেখার চেষ্টা করব।
চাঁপাইনবাবগঞ্জটিভি : সীমান্তঘেঁষা জেলা হিসেবে মাদক একটি বড় সমস্যা, এটি প্রতিরোধে আপনার ভূমিকা...
আবদুল কাদের : মাদক সারা বাংলাদেশেই ভয়াবহ সমস্যা হিসেবে রূপ নিয়েছে। জননেত্রী শেখ হাসিনা কঠোর হস্তে এর দমন শুরু করেছেন। আমি মনে করি এটি যৌক্তিক। মাদককে আমরা ‘না’ বলব, এটিই হচ্ছে আমাদের প্রত্যাশা। সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাস করি আমরা। বিশেষ করে শিবগঞ্জ, গোমস্তাপুর ও ভোলাহাটের অংশ সীমাবন্তবর্তী এলাকা হিসেবে অনায়াসে মাদক ঢুকে পড়ে। আমি মনে করি, আমরা মাদক দমন করতে সক্ষম হবো। এজন্য সকলের আন্তরিকতা এবং সহযোগিতা লাগবে। বিশেষ করে পুলিশ প্রশাসন, যারা বর্ডার নিয়ন্ত্রণ করে অর্থাৎ বিজিবির। সর্বোপরি জনসাধারণের ঐক্য থাকলে এটি দমন করা সহজেই সম্ভব। সেই সাথে সাথে আমি এটাও মনে করি যে, কিছু কিছু এলাকায় এ বিষয়ে কিছু লাইসেন্সধারী ব্যক্তি রয়েছে। এ জায়গা থেকে আমাদের সরে আসতে হবে। মাদকের লাইসেন্স থাকলে তো মাদক নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। আল্লাহ যদি আমাকে সুযোগ তৈরি করে দেন, এই মাদক নিয়ন্ত্রণের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নিব এবং নিরাময় করব।
চাঁপাইনবাবগঞ্জটিভি : দল বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু...
আবদুল কাদের : ২০০৮ থেকে ২০১৮ সাল দীর্ঘ এই দশ বছরে জননেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের বিভিন্ন সেক্টরে যে উন্নয়ন করেছেন, সে উন্নয়নের জন্য আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আবারো ক্ষমতায় আসবে। কেননা দেশের মানুষ উন্নয়নের দিকে নজর দেবে এবং এ ধারাবাহিকতা রক্ষার চেষ্টা করবে। উন্নত বাংলাদেশ গড়ার জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনার যে প্রচেষ্টা তার দিকে মানুষের নজর আছে। কাজেই মানুষ গুরুত্ব দেবে। তার প্রমাণ হচ্ছে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ। যতই বিভ্রান্তিকর কথা বলা হোক না কেন আগামী দিনে আওয়ামী লীগ সরকার আবারো ক্ষমতায় আসবে এটিই আমি প্রত্যাশা করি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জটিভি : দলীয় মনোনয়ন না পেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছে আছে কিনা...
আবদুল কাদের : আমি দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি। এই সময়ে অনেকগুলো নির্বাচন এখানে পার করেছি। কোনো সময় দলের সিদ্ধান্তের বিপক্ষে কাজ করিনি, আগামী দিনেও ইনশাল্লাহ করবো না। দল যদি আমাকে নমিনেশন দেয় আমি নৌকার জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে কাজ করবো। যদি আমাকে নমিনেশন না দেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে নমিনেশন দেবেন তার পক্ষে আমি কাজ করবো এটাই আমার প্রত্যাশা। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোট করার কোনো ইচ্ছে আমার নেই এবং করবো না।
চাঁপাইনবাবগঞ্জটিভি : চাঁপাইনবাবগঞ্জটিভি পরিবারকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ...
আবদুল কাদের : চাঁপাইনবাবগঞ্জটিভি পরিবারের সব সদস্যকেও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নাচোল উপজেলা শাখার পক্ষ থেকে ধন্যবাদ এবং আন্তরিক অভিবাদন।
কনটেন্ট চুরি আপনার মেধাকে অলস করে তুলে, আমরা এ নিন্দনীয় কাজকে নিরুৎসাহিত করি। এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।