কেমন গেল আমের রাজধানীর এবারের আম মৌসুম


করোনাকালে কেমন গেল আমের রাজধানী খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জের এবারের আমের মৌসুম। মৌসুমের শেষ সময়ে ব্যবসায়ীদের কাছে জানতে চেয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ টিভি। এ বারের আম মৌসুমকে ব্যবসায়ীরা দেখছেন ভালমন্দ মিলিয়েই কেটে যাওয়া একটা মৌসুম। তারা বলছেন করোনাকালে যেটুকু ব্যবসা বানিজ্য হয়েছে, সেটায় অনেক। অন্যদিকে কৃষি মন্ত্রনালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী বছর, ১ লাখ মেট্রিক টন আম বিদেশে রপ্তানীর যে লক্ষ্যমাত্রা, সেই বাজার ধরতে চাঁপাইনবাবগঞ্জে কৃষি বিভাগের তত্বাবধানে শুরু হয়েছে বাগানের পরিচর্যা।  

এবার আম মৌসুমের শুরুতে চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রকট আকার ধারন করে করোনা। করোনার সংক্রমন ঠেকাতে ২৫ মে থেকে স্থানীয়ভাবে দুই দফায় ১৪ দিনের লকডাউনও ঘোষনা করতে হয়েছিলো জেলা প্রশাসনকে। এরপর জাতীয়ভাবেও সারাদেশে চলমান ছিলো লকডাউন র্সাটডাউন পরিস্থিতি। যদিও এসব বিধিনিষিধের বাইরে রাখা হয়েছিলো আম কেন্দ্রিক বানিজ্য তবুও অনেকখানি প্রভাব ফেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম কেনাবেচায়। পড়ে গিয়েছিলো আমের দাম। সবচেয়ে বেশি পড়ে গিয়েছিলো ফজলি আমের দাম, ৪০০-৫০০ টাকা মন দরে বিক্রি হয়েছে ফজলি আম। আমের এ দরপতনে ব্যবসায়ীরা বরাবরই করোনাকেই দায়ি করেছেন। তাদের মতে করোনাকালে সবার মাঝেই অস্বস্থিভাব, তারা কিভাবে আম কিনবে, তাই পড়ে যায় আমের বাজার।
আবার মৌসুমের মেষ দিকে কিছুটা চাঙ্গা হয় আমের বাজার। ৪০০-৫০০ টাকার ফজলি ২৫০০-৩০০০ টাকায় বিক্রি হওয়া শুরু হয় শেষ দিকে। ্আর প্রচলিত জাতের  মধ্যে সবার শেষে পাকা আশির্^নার বাজার দল ছিলো ১৩০০ টাকা মন। শেষে তা ২৫০০-৩০০০ টাকা মন দরে বিক্রি হয়েছে। এ দুই আমের দাম ও উৎপাদন খরচে কিছুটা হলেও ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জে যত আম উৎপাদন হয়, তারমধ্যে ফজলি হচ্ছে সবচেয়ে বেশি এরপর আশির্^না। এই দুই আমের দামই আশানুরুপ ছিলো না এবার। তবে খিরসাপাতসহ অন্য আমগুলোর দাম নিয়ে মোটামুটি সন্তোস ছিলো ব্যবসায়ীদের।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের অন্যতম আম উদ্যোক্তা ইসমাইল খান শামীমের মতে,  এবার গেল ২০ বছরের তুলনায় সবচেয়ে বেশি আম উৎপাদন হয়েছে। বাড়তি আমের উৎপাদনে সবাই কমবেশি লাভবান হয়েছেন শুধু লাভ হয়নি প্রকৃত চাষীর। বেশি আম তাই ফ্রুটব্যাগ বিক্রি বেশি হয়েছে, বেশি প্রয়োজন পড়েছে কীটনাশক, বেশি প্রয়োজন ছিলো ক্যারেট ঝুড়ি, দরকার পড়েছে বেশি শ্রমিকের, লকডাউনে কারনে কুরিয়ারের ব্যবসাও ছিলো ভালো, হাট ইজারাদারও বেশি খাজনা পেয়েছেন, লাভ হয়েছে আড়াৎদারের, আর অললাইনে যারা আম বিক্রি করেছেন তারাও লাভ করেছেন। শুধুমাত্র  লাভ হয়নি প্রকৃতি আম ব্যবসায়ী ও বাগানমালিকের। কারন আমের উৎপাদন খরচের চেয়ে মূল্য কিছুটা কমই পেয়েছেন তারা।

আম মৌসুমের মূল্যায়ন করতে গিয়ে ইসমাইল খান শামীম বলছেন, আম রুপালী আম ও ফজলি একসাথে বাজারে আসার কারনে ফজলি আমের দাম করে গিয়েছিলো,আর চাঁপাইনবাবগঞ্জে ফজলি আমই বেশি ফলে। তার মতে প্রচলিত জাতগুলোর প্রতি ভোক্তাদের চাহিদা কমছে দিন দিন, তাই উদ্যোক্তাদের ভোক্তা চাহিদার কথা মাথায় রেখেই আমের জাত নির্বাচন করে বাগান গড়ে তুলতে হবে। তাহলে লাভবান হওয়া সম্ভব, না হলে ক্ষতির মুখেই পড়বে উদ্যোক্তারা।
ফল উৎপাদনে জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষি উদ্যোক্তা মতিউর রহমান এবারের আম মৌসুমকে সবমিলিয়ে ভালই বলছেন। তারমতে আমের দামের উঠানামা ছিলো, তারপরও স্থানীয় প্রশাসনের নানামুখী উদ্যোগে করোনাকালে আমের যেটুকু বানিজ্য হয়েছে, সেটিও কম ছিলো না। এবার উৎপাদন অনেক বেশি থাকার কারনে আমের দাম কিছুটা কম ছিলো। তারপরও বর্তমানে আমের জাত বৈচিত্রের কারনে ও ফ্রুটব্যাগিং করার কারনে এখনো চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাজারে আম পাওয়া যাচ্ছে, আশির্^না, বারো-১১ সহ বেশ কিছু জাতের আমের স্বাদ নিতে পারছেন ভোক্তারা, এতে করে আমের মৌসুমের সময়কাল দীর্ঘ হচ্ছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, এ বছর ৩৪ হাজার ৭৩৫ হেক্টর জমিতে আম উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা আড়াই লাখ মেট্রিকটন থাকলেও, তা ছাড়িয়ে তিন লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হয়েছে। আম মৌসুমের শুরুতে করোনার একটা ধাক্কা থাকলেও, আমরা চেষ্টা করছি আম কেনাবেচা স্বাভাবিক রাখতে। ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনের মাধ্যমেও আম ঢাকায় পাঠানো হয়েছিলো। অললাইনেও এবার অনেকেই আম কেনাবেচার সাথে যুক্ত ছিলেন।

প্রথম দিকে আমের দাম কিছুটা কম থাকলে শেষ দিকে ভাল দাম পেয়েছেন ব্যবসায়ীরা। আগামীতে বাংলাদেশ থেকে এ লাখ মেট্রিকটন আম বিদেশে রপ্তানির পরিকল্পনা করা হচ্ছে, সেই লক্ষে চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমরা ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করেছি। রপ্তানিযোগ্য আম উৎপাদনের প্রয়োজনীয় পদ্ধতি অনুসরন করে বাগানগুলোতে পরিচর্যা শুরু  হয়েছে। এছাড়াও নাবি ও বারোমাসি জাতের আমে দাম ভাল পাওয়ায় নাবি জাতের বাগান বৃদ্ধি পাচ্ছে, আগামীতে সেটিরও সুফল আমরা পাব। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে চাষীদের সবধরনের সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে, আমরা আশাকরি আমকেন্দ্রিক অর্থনীতি আরো বাড়বে এ জেলার।

 

 

আমাদের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন https://bit.ly/2Oe737t কনটেন্ট চুরি আপনার মেধাকে অলস করে তুলে, আমরা এ নিন্দনীয় কাজকে নিরুৎসাহিত করি। এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

About chapainawabganj tv

0 Comments:

Post a Comment

বিজ্ঞাপন

src="https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js?client=ca-pub-5331163805288347" crossorigin="anonymous">

7