বরেন্দ্র এলাকায় বাড়ছে পুকুর ও আমের বাগান :: কর্মহীন হওয়ায় শঙ্কায় প্রান্তিক চাষীরা


বাংলাদেশের মানুষের খাদ্যাভাসে এখনো প্রধান খাবার ভাত। আর এ কারণে ধানের উৎপাদনের দিকে সবসময়ই গুরুত্ব দেয়া হয়ে থাকে। প্রান্তিক কৃষক ও মজুরদের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম আর কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে এক ফসলী জমি হয়েছে দুই ফসলী, দুই ফসলী হয়েছে তিন ফসলী। সবমিলিয়ে বেড়েছে উৎপাদন। উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও নানা কারণে কমেছে ধান চাষের জমি, ক্রমাগতভাবে তা কমতেই আছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাতে কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী গত ১০ বছরে ধান চাষের জমি কমেছে অন্তত ৭ হাজার হেক্টর। এভাবে ধান চাষের জমি করতে থাকলে আগামীতে ধানের উৎপাদন শঙ্কার মুখেও পরতে পারে। অন্যদিকে কৃষক পরিবারগুলো এখন কর্মহীন হওয়ার চিন্তা মাথায় নিয়েই দিনাতিপাত করছেন, কেউ কেউ পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছেন।

সাম্প্রতিক কালে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ধানের জমিতে আম বাগান করার হিরিক চলছে। এমনকি ধান উৎপাদনের জন্য পরিচিত বরেন্দ্র এলাকায়ও বাড়ছে আমসহ বিভিন্ন ফলের বাগান। হচ্ছে মাছ চাষের পুকুর। উদ্যোক্তারা জমির মালিকের কাছে ১৫-২০ বছরের জন্য দীর্ঘ মেয়াদে জমি লিজ নিয়ে আমসহ বিভিন্ন ফলের বাগান গড়ে তুলছেন। কেউ কেউ করছেন পুকুর, প্রতি বছর বিঘা প্রতি ৫-১০ হাজার টাকা দিয়ে জমির মালিকের কাজ থেকে জমি লিজ নিচ্ছেন তারা। এতে মূলজমির মালিক খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্থ না হলেও কর্মহীন হয়ে পড়ছেন বর্গাচাষী বা প্রান্তিক কৃষক পরিবারটি। কৃষিতে পরিকল্পিত ফসলের মানচিত্রায়ন না হওয়ায় সহজেই পরিবর্তিত হচ্ছে জমির ধরণ।

সম্প্রতি চাঁপাইনবাবগঞ্জে নাচোল উপজেলার নেজামপুর ইউনিয়নের টকটকা এলাকায় দীর্ঘমেয়াদী লিজের মাধ্যমে আম বাগান গড়ে তোলার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায়, এতে বাধা দেন ওই এলাকার বর্গা চাষীরা। এ নিয়ে তারা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে স্মারকলিপিও দিয়েছেন।
প্রতিবাদ করা কৃষকদের একজন টকটকা এলাকার সাদিকুল ইসলাম। বর্গাচাষী সাদিকুল ইসলাম কর্মহীন হওয়ার পথে। তিনি যে জমি চাষ করতেন , সেই জমিও লিজ দিয়ে দিচ্ছে জমির মালিক। কর্মহীন হওয়ার কষ্টের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন কৃষক সাদিকুল ‘‘ আজ ১৫ বছর থ্যাকা হ্যামি জমিটা করতাম, এখন হ্যামার প্যাটে ল্যাথ ম্যারা জমিট্যা লিয়্যা লিবে, হ্যামি কি কইর‌্যা খাব, হ্যামি জোরদারের হাত ধরলাম, পা ধরলাম, কিছুই হইল না, কষ্টে হামার অন্তত ফ্যাটা যাছে।
আরেক বর্গা চাষী ধীরের টুডু, তিনি বলেন আগে এসব জায়গায় বাগান ছিলো না, এখন যেখানে আবাদ করব, সেই সব জমিতেও বাগান করার ল্যাগা লোক ঘুরছে।
বাংলাদেশ কৃষক সমিতির চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শাখার অর্থ সম্পাদক তৌফিকুল ইসলামের মতে, প্রান্তিক কৃষকের দূরঅবস্থা যে হবে, এটা আগে থেকেই বোঝা যাচ্ছিল, তাদের চাষের জমি হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে, ক্রমাগত লোকশানের মুখে পড়ে প্রান্তিক কৃষক দিন দিন বেকার হয়ে যাচ্ছে । আমরা মনে করি লিজের মাধ্যমে বহুজাতিক কম্পানী বা এক ব্যাক্তির কাছে জমি চলে যাওয়া বন্ধ করতে হবে, প্রয়োজনে সরকারি মাধ্যমে জমির সঠিক বন্টন হোক, সেখানে কাজের সুযোগ পাবে বর্গাচাষীরা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক নজরুল ইসলামও বলছেন, ইদানিং দেখা যাচ্ছে যে উর্বর জমির ধরন চেঞ্জ হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য খারাপ, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আছে জমির ধরন পরিবর্তন না করার।  তারপরও কিন্তু এটা হচ্ছে, প্রতিনিয়ত প্রশাসন ও আমরা সজাগ আছি যাতে জমির ধরন চেঞ্জ যাতে না হয়।
অন্যদিকে জমির ধরণ পরিবর্তনে এলাকার ভারসাম্য নষ্ট হয়, আমরা কৃষককে এক ফসলী জমিকে দুই ফসলী, দুই ফসলী জমিতে তিন ফসলীসহ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য পরামর্শ ও সহযোগিতা দিচ্ছি, কিন্তু এর মাঝে যদি জমির ধরন পরিবর্তন হয়ে যায়, তখন এসব কাজে আসবে না। বিশেষ করে আমাদের খাদ্যের উৎবৃত্ত জেলা হিসাবে পরিচিতি আছে, সেটাও অন্যদিকে যেতে পারে।
ধানের জমিতে আমবাগান বা ধরন পরিবর্তনের বিষয়ে, নজরুল ইসলাম বলেন, সাময়িক লাভ চিন্তা না করে, আমাদের সুদূর প্রসারী চিন্তা করতে হবে। আমাদের ধান চাষ করতেই হবে, কারন ধান খেয়ে আমাদের বেঁচে থাকতে হবে। অন্যদিকে ধরন পরিবর্তন হলে আমাদের বর্গা চাষীরা অসহায় হয়ে পড়বে। তাদের বিষয়ও ভাবতে হবে।

 

আমাদের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন https://bit.ly/2Oe737t কনটেন্ট চুরি আপনার মেধাকে অলস করে তুলে, আমরা এ নিন্দনীয় কাজকে নিরুৎসাহিত করি। এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

About chapainawabganj tv

0 Comments:

Post a Comment

বিজ্ঞাপন

src="https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js?client=ca-pub-5331163805288347" crossorigin="anonymous">

7