তাহমিদুর রহমান, নিজস্ব প্রতিবেদকঃছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল আয়তনের বাংলাদেশের নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সমৃদ্ধ ইতিহাস, ঐতিহ্য, বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি, দৃষ্টিনন্দন জীবনাচার মন কাড়ে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের। পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত, প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন, ঐতিহাসিক মসজিদ ও মিনার, নদী, পাহাড়, অরণ্যসহ হাজারও সুন্দরের রেশ ছড়িয়ে আছে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত। ঐতিহাসিক নিদর্শন ও প্রত্নসম্পদে সমৃদ্ধ চাঁপাইনবাবগঞ্জ। এটি প্রাচীন বাংলার একটি সমৃদ্ধ জনপদ। এই জেলায় অন্যতম ঐতিহাসিক স্থান হচ্ছে ষাঁড়বুরুজ। যা এই জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার প্রাণকেন্দ্র রহনপুরে অবস্থিত। রহনপুর ও এর আশপাশের এলাকায় অগণিত প্রাচীন ঐতিহ্যের নিদর্শন রয়েছে। ষাঁড়বুরুজ বর্তমানে বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের আওতাভুক্ত একটি ঐতিহাসিক স্থান। এটি মূলত প্রাচীন বাংলার মধ্যযুগীয় সেন রাজবংশের চতুর্থ ও শেষ রাজা লক্ষ্মণ সেনের স্মৃতিবিজড়িত স্থান।
চাঁপাই নবাবগঞ্জের ২৮ মাইল পশ্চিমে অবস্থিত বিখ্যাত বাণিজ্য কেন্দ্র রহনপুর। পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ক্ষুদ্র অথব খরস্রোতা নদী পুনর্ভবা। মহানন্দা ও পুনর্ভবার মিলনস্থল এর নিকটেই নওদা ষাঁড়বুরুজ এর অবস্থান। রহনপুর রেল স্টেশনের ঠিক উত্তরে এক কিলোমিটার গেলেই বেশ কিছু উঁচু একটি ঢিবি নজরে পড়ে। গোমস্তাপুর উপজেলা থেকে প্রায় ৬-৭ কিলোমিটার দূরে নওদা নামক স্থানে এটি অবস্থিত। খালি চোখে দেখলে মনে হবে একটি বিশাল ঢিবি। কিন্তু অনুসন্ধানী চোখে দেখলে মনে হবে তমাশাচ্ছন্ন ইতিহাসের কালো মেঘে স্থানটি ঢাকা।
রাজা লক্ষন সেনের আমলে রহনপুর বানিজ্য নগরী হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করে। বানিজ্যক কারনে রহনপুরই তিনি গড়ে তোলেন সূরম্য অট্রালিকা, যা বর্তমানে বিলুপ্তির পথে। ষাঁড়বুরুজ নামে খ্যাত এই অট্রালিকাটির প্রকৃত নাম শাহবুরুজ। শাহ শব্দের অর্থ বাদশা আর বুরুজ শব্দের অর্থ অট্রালিকা বা বালাখানা। যা পরবর্তীতে লোকমুখে ষাঁড়বুরুজ নামে খ্যাতি লাভ করে। এই অট্রালিকার অদূরে গুমুজ নামে একটি ভবন আছে। লোকমুখে জানা যায় এটি রাজা লক্ষন সেনের বৈঠক খানা ছিল এবং এখানে তিনি তার দরবার চালাতেন। বর্তমানে রাজা লক্ষন সেনের অট্রালিকাটির ভেঙ্গে পড়ে একটি পাহাড়ে রুপ ধারন করে। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় এ ভগ্ন ভবনের চার পাশে বিভিন্ন বনজ গাছ লাগালেও সংরক্ষনের অভাবে প্রায় নষ্ট হতে বসেছে। কারো কারো মতে, বাংলা বিজয়ী ইখতিয়ার উদ্দীন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজি এ পথে বাংলা আগমন করেন। ইতিহাস পরিচিত নদীয়া এই অট্রালিকার পাশেই অবস্থিত। যা পরবর্তীতে নওদা নামে পরিচিতি লাভ করে। লোক মুখে শোনা যায় বখতিয়ার খলজির আগমনের কথা শুনে ভীত হয়ে রাজা লক্ষন সেন নদী পথে পলায়ন করে। বর্তমানে বিলপ্তির পথে এই ঐতিহ্যবাহী নির্দশনটি সরকারী কিংবা বেসরকারী পৃষ্টপোষকতা পেলে একটি পূর্নাঙ্গ বিনোদন পল্লীতে বূপান্তরিত হতে পারে। এতে করে আমাদের এই ঐতিহাসিক নিদর্শনটি সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে এবং আমাদের আগামী প্রজন্ম এই সম্পর্কে জানতে পারবে।
আমাদের ইউটিউব চ্যালেন সাবস্কাইব করতে ক্লিক করুন https://bit.ly/2Oe737t কনটেন্ট চুরি আপনার মেধাকে অলস করে তুলে, আমরা এ নিন্দনীয় কাজকে নিরুৎসাহিত করি। এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।