ঘুড্ডি ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার ১০৪ টি অসহায় পরিবারের মাঝে বৃহস্পতিবার দুপুরে খাদ্যসামগ্রী উপহার দেয়া হয়েছে। এসব খাদ্যসামগ্রী বিতরণে সহযোগিতা করে চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরা। খাদ্যসামগ্রী হিসেবে প্রতিটি প্যাকেটে পাঁচ কেজি চাল, তিন কেজি আলু, আধা কেজি মুসর ডাল, এক কেজি মিষ্টি কুমড়া, একটি লাউ দেয়া হয়েছে।
অনেকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ বন্ধুসভার সাবেক সভাপতি আলী উজ্জামান নূর, সদস্য সোনিয়া খাতুন, সুমন আলী, উজলেফা বেগম, আলী আকবর প্রমূখ।
খাবার প্যাকেট পেয়ে পৌর এলাকার চাঁদলাই মহল্লার বিধবা নারী সাইফন নেসা (৬২) বলেন, হামার স্বামী ২০ বছর আগেই মারা গেছে। দুই ব্যাটার মধ্যে বড়টা জুদা (আলাদা) হয়্যা গেছে। আর ছোট ব্যাটা হেরোইন খায়্যা বেড়ায়। সংসারে কুনু খরচপাতি দ্যাই না। ওর ব্যাটা-বহুকেও (ছেলের বউ) দেখতে হয় হামাকে। এ বাড়ি, ও বাড়ি গিয়ে কিছু কাম কইর্যা সংসার চালায়। এ অসুখের সময় কামও বন্ধ হয়্যা গেছে। ভাইরাস আইস্যা একবারই কিছু চাইল সাহায্য পাইয়াছিনু। সেটা কবেই শ্যাষ হয়্যা গেছে। বড়ই কষ্টে দিন কাটছিল। আইজ চাইল, ডাইল, সবজি পাইয়্যা খুব উপকার হোইল। তোমরাঘে আল্লাহ ভাল করবে।
পৌর এলাকার বেলেপুকুর মহল্লার রিক্সাচালক কাশেম আলী (৬৪) বলেন, আগে কুনুমতে রিক্সা চালিয়্যা দুটা ডাইলভাত খাইতে পাইতুম। কিন্তু এই ভাইরাস আসার পর থ্যাইক্যা ভাড়া হয় না। কুনু দিন ৫০-৬০ টাকা, কুনুদিন ১০০ টাকা পর্যন্ত হয়। এতে অনেক কষ্টে দিন পার করছি। আইজ খাবার পাইনু। খুব উপকার হইলো।
গোমস্তাপুর উপজেলার গোমস্তাপুর বাজার এলাকার দিনমজুর সাজেমান আলী (৪৭) বলেন, ভাইরাসের কারণে লকডাউন থেকে কাজ নাই। তিন মেয়েসহ পাঁচজনের সংসারে তিন বেলা খাবার জুটাতেই কষ্ট হয়। এ খাবার পেয়ে কয়েকটা দিন কষ্টটা একটু কমবে। যে প্রতিষ্ঠান দিল তাঁদের ধন্যবাদ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার চাঁদলাই মহল্লার বাক প্রতিবন্ধী মনিরুল ইসলামের স্ত্রী সুমেরা বেগম বলেন, আমার স্বামী বাক প্রতিবন্ধী হওয়ায় একটি চায়ের স্টলে দিনমজুরের কাজ করতো। কিন্তু ভাইরাসের জন্য স্টল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেকার বসে আছে। তিন ছেলে মেয়েকে নিয়ে মানবেতর জীবন যাবন চলছে। এখন পর্যন্ত দুই প্রতিষ্ঠান থেকে ১০ কেজি করে চাল পেয়েছিলাম। কিন্তু এতে কী জীবন চলে। তরকারি ও মশলাপাতিতো দরকার। সেগুলো কেনার টাকাও নেই ঘরে। অন্যের বাড়ি থেকে চেয়ে চিনতে নিয়ে এসে কোনমতে দুটা খাই। এই ত্রাণ পেয়ে খুব ভালো হলো। ঘুড্ডি ফাউন্ডেশনকে ধন্যবাদ।
জোড়বাগান মহল্লার বাসিন্দা প্যারালাইসেস রোগী আব্দুল মাজেদ (৫৮) বলেন, আগে ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাতাম। তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে ভালই চলতো সংসার। কিন্তু কয়েক বছর থেকে প্যারালাইসেস হয়ে ডান হাত-পা প্রায় অচল হয়ে গেছে। কথাও ঠিকমত বলতে পারি না। সেই সময় থেকে আর ভ্যান চালাতে পারি না। কাঠের মিলে একটু ফুটফরমায়েশ খেটে কোনমতে সংসার চলে। কিন্তু এ করোনাভাইরাসের জন্য সেটাও বন্ধ হয়ে গেছে। খুব কষ্টে দিন পার করি। একটি ছেলে তাও আবার ১০ বছরের। পুরো সংসারটাই আমার উপর নির্ভরশীল। তোমাদের এ খাবার পেয়ে খুব খুশি হয়েছি।
পৌর এলাকার উপর রাজারামপুর মহল্লার বিধবা সখিনা বেগম (৫০) জানান, ২০ বছর আগেই ছোট একটা মেয়ে রেখে তাঁর স্বামী মারা যান। সেই থেকে সংগ্রাম করে সংসার চালাতে হয়। একটি বিস্কুট তৈরির কারখানায় দিনে ১০০ টাকা মজুরিতে কাজ করতেন। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে সেটিও বন্ধ হয়ে যায়। ফলে জীবনটা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে তাঁর কাছে। কারখানা কর্তৃপক্ষ দুইবার কিছু চাল দিয়েছিল। সেটাও শেষ হয়েছে কবে। অন্যের বাসায় মাঝে মধ্যে কিছু কাজ করে কোনমতে দুবেলা খাবার পান। ঘুড্ডি ফাউন্ডেশনের খাবার পেয়ে তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
আমাদের ইউটিউব চ্যালেন সাবস্কাইব করতে ক্লিক করুন https://bit.ly/2Oe737t কনটেন্ট চুরি আপনার মেধাকে অলস করে তুলে, আমরা এ নিন্দনীয় কাজকে নিরুৎসাহিত করি। এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।