নানী ও মায়েরা শিক্ষার্থী ছিলেন, আমিও এখানেই পড়েছি

চাঁপাইনবাবগঞ্জের নারী শিক্ষা বিস্তারে ভুমিকা রাখা অন্যতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হরিপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে শেষ হয়েছে ৫০ বর্ষ পূর্তি উৎসব। রবিবার দুপুরে হরিপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, মঞ্চে একে একে ধারাবাহিক আয়োজন চলছে, অতিথিদের বক্তব্য, মাঝে মাঝে পুরনো শিক্ষার্থীদের স্মৃতিচারন।
দুই দিনের উৎসবে যোগ দিয়েছিলেন প্রায় ১ হাজারের বেশি পুরোনো শিক্ষার্থী। তেমনি একজন মেহেরুন্নেসা লিরা। তার সাথে উৎসবে যোগ দিয়েছেন মা ও তার তিন খালা। লিরা বলছিলেন, মায়েদের সাথে একসাথে উৎসবে এসে দুই দিনে অনেক ভাল সময় কাটালাম। এ স্কুলের প্রথম ব্যাচের ১৯৭০ সালের শিক্ষার্থীদের সন্মাননা জানানো হচ্ছে, আমার নানী কহিনুর বেগম প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন, আমার মা ও খালাম্মারাও এখানে পড়ালেখা করেছে সত্যি বিষয়টা আমার কাছে অনেক আনন্দের। ২০১৩ সালে আমি এখান থেকে পাশ করার পর আর তেমন আসা হয়নি,এমনিতে আমরা সবাই রাজশাহীতে থাকি,উৎসবকে ঘিরে নানা বাড়িতে আসার সুযোগ হয়েছে ভালই কাটছে সময়।
লিরার বড় খালা হাবিবা খাতুন জানালেন, তারা ৪ বোনই হরিপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেছেন। তিনি ৮৯ ব্যাচের, তার ২য় বোন আম্বিয়া বেগম ৯৫ ব্যাচের, ৩য় বোন মাবিয়া খাতুন পাশ করে বেরিয়েছে ৯৭ সালে আর সব ছোট বোন নূরন্ননাহার লাবলি ছিলো ৯৯ সালে। তাদের বাড়ি হরিপুর বোর্ডঘর এলাকায়, পিতার নাম মাহতাব উদ্দীন।
হাবিবা খাতুন বলেন, যথন তারা পড়ালেখা করতেন তখন খড়ের বেড়া দেয়া স্কুল ছিলো, এই নিয়ে তারা গম্ভিরা করেছিলেন, গম্ভিরার কথা ছিলো ‘ঘরের মধ্যে নাই পার্টিশান, নাই কোন জানালা, ম্যাগ উঠলে হয় আন্ধার, পড়া দেখতে পায়না।’
লিরার মা আম্মিয়া বেগম বলেন, ৫০ বছর পূর্তির অনুষ্ঠান হচ্ছে এটা যখন জানতে পেরেছিলাম, তখনই আমরা সবাই রেজিস্টেশন করে নেয়, আর রাজশাহীতে আমরা সব বোনেরা থাকি, উৎসবে যোগ দিতে এসেছি। পুরনো দিনের বান্ধবীদের অনেকের সাথেই নতুন করে দেখা হলো। গল্প হলো অনেক মজা করেছি।
হরিপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শুরু দিকের শিক্ষার্থী ছিলেন হাজেরা বেগম, স্মৃতিমন্থর করে তিনি বলছিলেন বিদ্যালয়ের দুটো ঘর ছিলো, ঝড় বৃষ্টি আসলে তারা দ্রুত দৌড় দিয়ে বাড়ি চলে যেতেন, নিজেরা ক্লাসের মেঝে মাটি দিয়ে সংস্কার করতেন, পরিস্কার পরিছন্নতার কাজও তারা শিক্ষার্থীরা করতেন। তিনি বলেন, আমাদের সময় এতো সুন্দর পরিবেশ ছিলো না, এখন স্কুলের অনেক উন্নতি হয়েছে।
আরেক শিক্ষার্থী শিরিন জানান বলেন, হরিপুর চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার মধ্যে হলেও কিছুটা শহরের বাইরেই, এখানে নারীদের শিক্ষার জন্য এ স্কুলটি প্রতিষ্ঠা হয়েছিলো বলেই,আমার মত অনেকেই পড়ালেখা সহজেই চালিয়ে যেতে পেরেছে।
বর্তমান ৬ষ্ঠ শ্রেনীর শিক্ষার্থী মাইসা মাহমিদা এই দুই দিন বিদ্যালয়ে উৎসব আমেজের কথা উল্লেখ করে বলছিলেন, দুইদিন খুবই ভাল কাটল। অনেক বড় আপুরা এসেছে, তাদের সাথে ভালই সময় কেটেছে। নিজেদের মত করে দুই দিন কাটালাম, কোন পড়ালেখার টেনশন ছিলো না।
বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠার ইতিহাস বলতে গিয়ে শিক্ষক হাসিনুর রহমান রহমান বলেন, প্রথমে দুটো খড়ের ঘর করে এটানে পাঠদান শুরু হয়েছিলো, প্রথমে ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে ৭ জন ও সপ্তম শ্রেনীতে ৬ জন শিক্ষার্থী ছিলেন।
শনিবার হরিপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৫০ বছর পূতি উৎসবের উদ্বোধন করেছিলেন, খাদ্য মন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাসির আখতার জানান, ১৯৩৬ জন শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করেছিলো, এমধ্যে পুরোনো শিক্ষার্থী রয়েছে ১ হাজারের মত। ৫০ বছর পূতি উৎসবে ‘ এইতো সেদিন’ নামে একটা স্মরনিকা প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন লেখা ও বিদ্যালয়ের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে।




আমাদের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন https://bit.ly/2Oe737t  কনটেন্ট চুরি আপনার মেধাকে অলস করে তুলে, আমরা এ নিন্দনীয় কাজকে নিরুৎসাহিত করি। এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

About chapainawabganj tv

বিজ্ঞাপন

src="https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js?client=ca-pub-5331163805288347" crossorigin="anonymous">

7