ছোট ছিলাম। 
  দিন গুনতে শুরু করতাম।কবে সপ্তমী,অষ্টমী।মহালয়ার দিন থেকেই শুরু হতো সময় 
দেখে নেয়া (আঙ্গুলের কড়া ধরে ধরে গুনতাম।পরে কোথায় যেন পড়েছি,ইউরোপীয়রা 
আমরা যেমন এক আঙ্গুলে চার গুনি,ওরা এক আঙ্গুলে এক গণনা করে।ফলে হিসাব হয়ে 
যায় কঠিন।)। 
 পূজার পনেরো দিন আগেই শুরু হতো হিসাব নিকাশ।কতটি 
নারকেল কেনা হবে।এর মধ্যে ছাল সুদ্ধু কতগুলি,ছাল ছাড়ানো কতগুলি!নারকেল 
ছোবড়া ছাড়ানো হলে,দাম একটু বেশী হয়।তাছাড়া ছোবড়া দিয়ে ধূপচি জ্বালানো হয়।
 বাবাকে গম্ভীর মুখে বলতাম, "ত্রিশখান নারকেল লাগবে।"
 মা রণ চন্ডী রূপ ধারণ করে তেড়ে আসতো।সবগুলা নারকেল এর ছোবড়া ছাড়িয়ে,তা 
কুড়িয়ে, নাড়ু করে বয়ামে শোভা বর্ধন ;সব কিছু একা হাতে করতে হতো মা কে। 
রাগার যথেষ্ট যৌক্তিকতা আছে।এখন বুঝি।
 সারা বাড়িতে বয়াম ধূয়ে রোদে 
শুকানো হতো।তাতে শোভা পেতো,নারকেল এর নাড়ু,চিড়ার নাড়ু, মুড়ির মোয়া,গজা 
ইত্যাদি ইত্যাদি।মুড়কি টুড়কি তো আছেই। আমরা খেতাম,এলাকাবাসী খেতো।উৎসব উৎসব
 ভাব।
 জামা কাপড় নিয়ে ঝগড়া হতো প্রচুর।আমার বোন,বড় এবং মেয়ে হওয়াতে 
আমার চেয়ে বেশী জামা পেতো।মা এর যুক্তি,"দু'দিন পর শ্বশুড়বাড়ি চলে যাবে!!"
বাবার সাথে বাজার যেতাম।আমার পছন্দ স্বভাবতই নীল বা লাল।বাবার ধমক।
 "লাল জামা ভদ্র ঘরের কেউ পড়ে!"
 ফ্যাকফ্যাকা (নবাবগঞ্জের ল্যাঙ্গুয়েজ) সাদা জামা নিয়ে চলে আসতাম।মুখ হাঁড়ি করে।
 নদীতে নৌকায় করে বাবার সাথে পূজা দেখতে যেতাম।বাড়ি থেকে অনেক দূরে।বাবার ভাষ্য,"গ্রামের পূজায় আনন্দ আছে।এরা গরীব।কিন্তু মনটা বড়।"
 নিজের ছায়া,তারপর বাবার ছায়া দেখতাম নদীর জলে।ঐ দূরে কাশবন। কাশ ফুল।মাটির গন্ধ।জলের গন্ধ।মাছের গন্ধ।
 "একটা সময় আমাদের বাড়ির মেয়েদের বাইরে যাওয়া নিষেধ ছিলো।তৎকালীন নবাবগঞ্জ 
মহকুমার সব প্রতিমা আমাদের বাড়ির সামনের মাঠে আসতো।বাড়ির মেয়েরা জানালার 
নেটের ওপাশ থেকে প্রতিমা দেখতো।"
 বাবা বলে চলেছে।সাথে মাঝির দাঁড় 
বইবার শব্দ।জলের শব্দ।সেখান থেকে হেঁটে মাইল চারেক।যেতাম।বাবা গল্পে মেতে 
উঠতো। এখন বুঝি, বাবার বয়সে গল্পে মেতে ওঠার প্রাপ্তিটা কি!
 মা এর 
হালকা লাল পারের শাড়ি। মা পূজা দেখতে গেলেন। সঙ্গে কোলের উপর আমি।কৌতুহলী 
চোখে অবাক বিস্ময়ে দেখছি।কিভাবে হোন্ডা চালায় মানুষ।রিক্সাওয়ালার ঘামের 
হালকা কটূ গন্ধ আসছে।রিক্সার শব্দ,পাশ থেকে ও বাড়ির সে ছেলেটার চিৎকার।
 "আনন্দ কেমন আছিস?"
 দেখতে দেখতে বিজয়া চলে আসতো।স্কুল খুলে যেতো।কৌটায় নাড়ু না শেষ হওয়ার আগে 
আমার পূজা শেষ হতো না।ততোদিনে আবার আঙ্গুল গোনা শুরু। 
বৈশাখ,জৈষ্ঠ্য........
 সময়টা চলে গেছে।কাশফুল গুলি একা।জানিনা,ভরা মহানন্দায় আজো কোন ছেলেকে নিয়ে তার বাপ জলের গন্ধে মুগ্ধ হয় কিনা!
 জানিনা, কোন মা আজো ছেলে খাবে জন্যই ;আলাদা বয়ামে নাড়ু লুকিয়ে রাখে কিনা!
 জানিনা,প্যান্ট ধরে দাঁড়িয়ে থাকা (নতুন প্যান্ট ঢিলা হয়ে যাওয়ায়) মন্দিরের
 সামনে দাঁড়িয়ে অসুরের "হাতে কি যেন! " বলে তাকিয়ে থাকে কিনা!
 মহানন্দা আছে।শরৎ আছে।প্রতিমা আছে।বাবা নেই।সময়গুলি নেই।মেলাগুলি আজো বসে।যাবার ইচ্ছা হয় না।আম আঁটির ভেপুর বয়সটা বোধহয় পার। হেহে।
শারদীয়ার শুভেচ্ছা।ভাল থাকুক বাংলাদেশ।মুগ্ধ হোক বিশ্ব।
 বসুন্ধরার সবাই সুখে থাক।
কনটেন্ট চুরি আপনার মেধাকে অলস করে তুলে, আমরা এ নিন্দনীয় কাজকে নিরুৎসাহিত করি। এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

