সর্বপ্রথম এলাকার বেকারত্ব নিরসনে উদ্যোগী হবো : জিয়াউর রহমান



চাঁপাইনবাবগঞ্জ টিভি : আপনার সাংগঠনিক কর্মকান্ডের জন্য দল থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন- এরকমটাই অনেকের ধারণা। আপনার কোন কোন কর্মকা- মনোনয়ন পেতে সহায়ক হয়েছে বলে আপনি মনে করেন...

মুহা. জিয়াউর রহমান : আমি জনগণের সাথে মিশেছি, সাধারণ নেতাকর্মীদের সাথে মিশেছি। মেশার ফলেই একটা জনমত তৈরি হয়েছিল আমার পক্ষে। আপনারা জানেন, বিভিন্ন পর্যায়ে সার্ভে হয়েছিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে। এছাড়া আমাদের দলের সংগ্রামী সভানেত্রী, প্রিয় নেত্রী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বেও বিভিন্ন জরিপ হয়েছিল। সে জরিপে এ এলাকা তথা সর্বস্তরের মানুষ আমার পক্ষে তাদের মতামত দিয়েছিল, আর তারই প্রেক্ষিতে আমি মনোনয়ন পেয়েছি বলে মনে করি।



চাঁপাইনবাবগঞ্জটিভি : চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনটি বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত ছিল। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সে দুর্গে আঘাত হেনে আপনি আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। দশম জাতীয় সংসদে আপনি ছিলেন না। আপনার কছে কি মনে হয়, এবার জয়লাভ করা সহজ হবে আপনার জন্য...
মুহা. জিয়াউর রহমান : কোনো জায়গায় কোনো দুর্গ থাকে না। নদীর যেমন এ-কুল ভাঙে, ও-কুল গড়ে; রাজনীতিও তাই। একসময় তো মুসলিম লীগেরও দুর্গ ছিল। পরবর্তীতে মুসলিম লীগের দুর্গ আর থাকেনি। সময়ের ব্যবধানে, বাস্তবতার আলোকে সবকিছু পরিবর্তন হয়ে যায়। আমরা মনে করি, নাচোল-গোমস্তাপুর-ভোলাহাটের মানুষ খুব সহজ সরল। এই সহজ সরল মানুষকে বিশেষ করে, আমার মুরুব্বিদের, আমার মা-বাবা, আমার বড়ভাই; তাদেরকে একসময় বিভিন্ন কথা বলে বিভ্রান্ত করা সম্ভব হয়েছিল। আর সম্ভব হয়েছিল বলেই মানুষের ধারণা ছিল যে, জামায়াত-বিএনপির দুর্গ এটি। তবে এখানে জামায়াত-বিএনপির ভোট আছে, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। কমবেশি সব দলেরই ভোট আছে। কিন্তু এ এলাকার সাধারণ মানুষ যারা, তারা সবসময় শান্তির পক্ষে, উন্নয়নের পক্ষে। এখানকার মানুষ সবসময় এলাকার সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নাসহ যে কোনো কষ্টে, আপদে-বিপদে পাশে কাকে পাবে- এ চিন্তাভাবনা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে। তারই প্রেক্ষিতে আমি বলব, তাদের সুখে-দুঃখে, হাসি-কান্নায়, কষ্টে-আনন্দে পাশে ছিলাম। তাদের আস্থা আছে যে, আমাকে তারা পাশে পাবে। এজন্য আমি বলব, নৌকা প্রতীক নিয়ে এ এলাকায় আমার বিজয় সুনিশ্চিত হবে ইনশাআল্লাহ।


চাঁপাইনবাবগঞ্জটিভি : এবারও কি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার তিনটি আসনই আওয়ামী লীগ ধরে রাখতে পারবে...
মুহা. জিয়াউর রহমান : এ কথা বলা খুব কঠিন আমার জন্য। উন্নয়নের যে ধারা, এ ধারার প্রতি যদি মানুষকে আকৃষ্ট করা যায় তাহলে আশা করি ফলাফল ভালো আসবে। আমি শুধু আমার নির্বাচনী এলাকার কথা বলতে পারি। আমি যেহেতু ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছি তিন উপজেলার মানুষের সাথে; এ তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম শিবগঞ্জ এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে। ওখানকার নেতৃবৃন্দ অর্থাৎ পলিটিক্যাল লোকদের সাথে সম্পর্ক আছে, কিন্তু সাধারণ মানুষের সাথে সম্পর্ক খুবই ক্ষীণ। তাই ওসব এলাকার অঙ্ক কষা খুব মুশকিল। তবে আমি বিশ্বাস করি, মানুষ উন্নয়ন চাই, শান্তি চাই। যেহেতু বর্তমান সরকারের সময় এ এলাকায় যথেষ্ট উন্নয়ন হয়েছে, এই এলাকায় শান্তিও বিরাজ করছে; তাই আমার বিশ্বাস, শান্তিপ্রিয় মানুষ শান্তির পক্ষে শান্তির প্রতীক নৌকায় তাদের রায় দেবে।


চাঁপাইনবাবগঞ্জটিভি : সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে কোন কাজগুলোকে অগ্রাধিকার দেবেন...
মুহা. জিয়াউর রহমান : এ কথা সত্য যে, রাস্তা, ব্রিজ, কালভার্ট হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোর উন্নয়ন হবে। বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান যেমন মসজিদ-মন্দির-গির্জা এসব হবে। রেলকে আরো কীভাবে মানুষের সেবায় লাগানো যায় এসব উদ্যোগ থাকবে।


চাঁপাইনবাবগঞ্জটিভি : আপনার কাছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ সংসদীয় এলাকার প্রধান সমস্যা কোনটি এবং এর সমাধানে আপনার কোনো পরিকল্পনা...
মুহা. জিয়াউর রহমান : আমি তিন উপজেলার সবচেয়ে বড় সমস্যা বলে মনে করি বেকারত্ব। বেকারত্ব দূর করার জন্য আমার প্রয়াস এবং উদ্যোগ থাকবে।


চাঁপাইনবাবগঞ্জটিভি : সীমান্তঘেঁষা জেলা হওয়ায় চাঁপাইনবাবঞ্জে মাদক একটি বড় সমস্যা। আপনার নির্বাচনী এলাকায় এটি প্রতিরোধে কী ধরনের ভূমিকা আপনি নেবেন...
মুহা. জিয়াউর রহমান : আমার এলাকা বললে ভুল হবে সারাদেশেই যুবক সমাজের জন্য এক মরণব্যাধি হচ্ছে নেশা। আমি সব জায়গাই ঘোষণা দিয়েছি, আমরা এই তিন উপজেলাকে (নাচোল-গোমস্তাপুর-ভোলাহাট) মাদকমুক্ত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করব। মাদকের পরিবর্তে যুবক সমাজকে একটি জায়গায় সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করব। যে জায়গা হচ্ছে- একটি ক্রীড়াঙ্গন, অন্যটি সাংস্কৃতিক অঙ্গন।


চাঁপাইনবাবগঞ্জটিভি : এখানকার বেকার তরুণদের কর্মসংস্থান কিংবা এ অঞ্চলে শিল্পায়নের জন্য আপনার কোনো ভাবনা আছে কি...
মুহা. জিয়াউর রহমান : আমরা জানি, ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়। আমার সন্তান যখন বেকার থাকে, তখন আমার ঘুম আসে না। সন্তান যখন বেকারত্বের অভিশাপে অভিশপ্ত জীবনযাপন করে, তখন তারও মনমানসিকতা অন্যরকম হয়ে যায়। আমরা চেষ্টা করব তা দূর করার। আমরা এও জানি, সরকারি উদ্যোগে সকলের কর্মসংস্থান বা সকলকে সরকারি চাকরি দেয়া সম্ভব নয়। আমার পরিকল্পনায় আছে, এখানে বিনিয়োগকারীকে নিয়ে আসব। ভোলাহাট উপজেলার রেশমসহ তিন উপজেলার আম এবং ধান উপকরণের ওপর ভিত্তি করে বিনিয়োগকারীরা যেন এখানে আসেন এবং এখানে যেন কর্মসংস্থান ঘটে, হাজার হাজার ছেলেমেয়ে কাজ পাই- এ উদ্যোগ আমি নেব। তবে এটাও সত্য যে, বিনিয়োগকারীরা তখনই আসবেন, যখন তারা লাভ দেখবেন। আমি কয়েকজন বিনিয়োগকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা জানিয়েছেন, রেশম, আম, ধান বাদে তারা অন্য বিষয়গুলো নিয়েও সার্ভে করবেন। সার্ভে করে যদি তারা দেখেন অন্য কোনো শিল্পকারখানা গড়ে তুললে লাভ হবে, তাহলে তারা বিনিয়োগ করতে রাজি আছেন। এছাড়া আপনারা জানেন, সরকারি পর্যায়ে বিদেশে লোক পাঠানো হয়। আমার এলাকার মানুষ বিভিন্ন কারণে এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকে। যারা কিছুটা সুযোগ পান, তাদের অনেকেই আবার প্রতারণারও শিকার হয়ে যান। এই যুবক সমাজের যেন বিদেশ যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়, সে লক্ষ্যে আমি উদ্যোগ নিব। আপনারা এও জানেন, আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রী জননেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ আছে, বাংলাদেশের বেকার ছেলেদের যারা পয়সার অভাবে ছোট্ট একটা ক্ষুদ্র ব্যবসা সৃষ্টি করতে পারছে না; তাদেরকে ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান করার। স্বল্প সুদে বন্ধক ছাড়াই এ ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান করা হবে। ঋণের পরিমাণ ৫০ হাজার, ১ লাখ, দেড় লাখ, সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা তাদের দেয়া হবে। এ বরাদ্দটা যেন আমার এলাকার যুবক সমাজ পায়, তার ব্যবস্থাটা আমি সুনিশ্চিত করবো এবং এর মধ্য দিয়ে এক হাজার ছেলেমেয়ের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবো বলে আমি পরিকল্পনা নিয়ে রেখেছি।


চাঁপাইনবাবগঞ্জটিভি : নাচোল ও গোমস্তাপুর উপজেলায় উল্লেখযোগ্য ভোটার হচ্ছেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ। এরা এখনো অবহেলিত। এদের ভাগ্যোন্নয়নে আপনার আলাদা কোনো পরিকল্পনা আছে কি...
মুহা. জিয়াউর রহমান : আমরা এদেরকে আদিবাসী হিসেবে অভিহিত করি, যদিওবা বলা হচ্ছে ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী; এই গোষ্ঠী যুগ যুগ ধরে শোষণ-বঞ্চনার শিকার হয়ে এখন নিঃস্ব অবস্থায় বসবাস করছে। মাথা গোঁজার জায়গাটাও নেই এদের। হয় খাস জায়গা, না হয় পরের জায়গায় তারা বসবাস করছে। এদেরকে নিয়ে আমার পরিকল্পনা আছে। এদের আর্থসামাজিক অবস্থা পরিবর্তনের জন্য সরকার এরই মধ্যে পরিকল্পনা নিয়েছে। তাদের উপবৃত্তি দেয়া হচ্ছে। এদের মধ্যে যারা কাজ করতে সক্ষম, তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে সমাজের বিভিন্ন কাজে লাগানোর চেষ্টা করবো। আর তাদের যে ভূমি সমস্যা, সেটা আলাপ-আলোচনা করে আইনানুসারে সরকারের বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেব। তারা যেন অহেতুক ষড়যন্ত্রের শিকার না হয়, জালিয়াত চক্রের ফাঁদে পা না দেয়, সেদিকেও খেয়াল রাখবো। আমি এরই মধ্যে আদিবাসী প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেছি। তবে তাদের নিয়ে প্রথম যে উদ্যোগটি নেয়া দরকার, তাহলো সর্বাগ্রে আদিবাসীদের সচেতন করে তুলতে হবে। সচেতন করার পর তাদের কাজে লাগানো হবে, তাদের কর্মসংস্থান ঘটানো হবে। এ পরিকল্পনা আমার রয়েছে।


চাঁপাইনবাবগঞ্জটিভি : সারাদেশে দল বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু...
মুহা. জিয়াউর রহমান : আমি শতভাগ আশাবাদী।


চাঁপাইনবাবগঞ্জটিভি : চাঁপাইনবাবগঞ্জটিভি পরিবারকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ
মুহা. জিয়াউর রহমান : আপনাদেরও ধন্যবাদ।



কনটেন্ট চুরি আপনার মেধাকে অলস করে তুলে, আমরা এ নিন্দনীয় কাজকে নিরুৎসাহিত করি। এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

About chapainawabganj tv

বিজ্ঞাপন

src="https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js?client=ca-pub-5331163805288347" crossorigin="anonymous">

7