দলের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছি, নেত্রী নিশ্চয়ই আমাকে মূল্যায়ন করবেন : গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস


চাঁপাইনবাবগঞ্জটিভি : দলীয় মনোনয়ন পেতে কতটুকু আশাবাদী...
গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস : আমি দীর্ঘদিন থেকে রাজনীতি করি। ১৯৭৮ সালে রহনপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হই। সে সময় থেকে সংগঠনের এমন কোনো পদ নেই, যে পদে আমি দায়িত্ব পালন করিনি। আমি রহনপুর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, থানা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক; বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জাতীয় পরিষদের সদস্য, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি নির্বাচিত হয়েছি। রহনপুর হাই স্কুলে আমরা দলীয়ভাবে ছাত্রলীগ থেকে ভোট করেছিলাম, সেখানে আমি কমনরুম সম্পাদক ও এজিএস নির্বাচিত হই। রহনপুর ইউসুফ আলী কলেজ ছাত্র সংসদে জিএস এবং পরবর্তীতে ভিপি নির্বাচিত হই। ছাত্রজীবনের সমাপ্তি ঘটলে আমি গোমস্তাপুর উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হই। পরবর্তীতে কারাগারে থাকা অবস্থায় উপজেলা যুবলীগের সভাপতি নির্বাচিত হই। এরপর গোমস্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছি। আমি দুইবার রহনপুর পৌরসভার নির্বাচিত মেয়র ছিলাম। সংগঠনের জন্য আমার অনেক অবদান। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে একজন সংগঠক হিসেবে যে উদ্দেশ্য, লক্ষ্য নিয়ে এমপি হওয়ার সুযোগ দিয়েছিলেন; আমি সে উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য যথাযথভাবে আমার দায়িত্ব পালন করে গেছি। আওয়ামী লীগের জন্য তিন উপজেলায় আমি স্থায়ী দলীয় অফিস নির্মাণ করেছি। গোমস্তাপুর উপজেলায় আওয়ামী লীগের স্থায়ী জায়গা ছিল না। সেখানে ২৮ লাখ টাকা ব্যয়ে জায়গা ক্রয় করে গোমস্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের নামে রেজিস্ট্রি করে দিয়েছি এবং কাজ শুরু হয়ে গেছে। ভোলাহাটে ২৫ লাখ টাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছি, যার কাজ শিগগিরই শুরু হবে। নাচোলে কাজ শেষ হওয়ার পথে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অফিস নির্মাণের জন্য কয়েক দিন আগে আমাকে ১০ লাখ টাকা দিয়েছেন। এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। যেহেতু আমি কোনো অসামাজিক কার্যকলাপ করি না, আমার সংগঠনকে আমি শক্তিশালী করার জন্য কাজ করি, আমার এলাকায় কোনো সন্ত্রাস, টেন্ডারবাজি নেই, এলাকায় আমার দ্বারা কোনো ক্ষমতার অপব্যবহার হয়নি; সেহেতু আমি দৃঢ়ভাবে আশাবাদী আমার নেত্রী, দেশরত্ন শেখ হাসিনা আবারও আমাকে মনোনয়ন দেবেন। এছাড়া বলব, দলের জন্য আমি অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছি, নেত্রী নিশ্চয়ই আমাকে মূল্যায়ন করবেন- এটা আমি আশা পোষণ করি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জটিভি : আপনার কোন কোন কর্মকা- মনোনয়ন পেতে ভূমিকা রাখবে...
গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস : এক. আওয়ামী লীগের স্থায়ী অফিস নির্মাণ; দুই. চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের প্রাণকেন্দ্র রহনপুরে আওয়ামী জনকল্যাণ ডেকোরেটর স্থাপন, যেখান থেকে দলের কার্যক্রমের জন্য সমস্ত কিছু ফ্রি দেয়া হয়; তিন. দলের নেতাদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কর্মশালার আয়োজন করেছি। আওয়ামী লীগসহ সহযোগী অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের সাংগঠনিকভাবে তাদের চিন্তাচেতনা বাড়ানোর জন্য প্রতিনিধি সভা করেছি। অনেক গ্রাম কমিটি পর্যন্ত গঠন করেছি। বর্তমানে সংসদ নির্বাচনের জন্য কেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠন করা শুরু করেছি। আমি দলের নেতাকর্মীদের ভালোবাসি, সহযোগিতা করি। আওয়ামী লীগকে আমি এই এলাকায় সুসংগঠিত করেছি। আমি বিশ্বাস করি, মূলত আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করার জন্য আমার যে কর্মকা-, এই কর্মকা-গুলো আমার মনোনয়ন পাবার জন্য ভূমিকা রাখবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জটিভি : আপনার প্রতি দলীয় নেতাকর্মীদের মনোভাব কেমন...
গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস : আমার প্রতি শতকরা ৯৫ ভাগ দলীয় নেতাকর্মীর মনোভাব ইতিবাচক বলে মনে করি। আর এর সাক্ষী দেবেন আমাদের নেতৃবৃন্দ...।

চাঁপাইনবাবগঞ্জটিভি : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলীয় কোন্দল কতটুকু দূর হতে পারে...
গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস : আমি যেটা মনে করি, আওয়ামী লীগ একটা বিরাট দল। এই দলে একাধিক প্রার্থী থাকতে পারে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী যাকে মনোনয়ন দেবেন, নৌকা প্রতীক দেবেন; তাকে আমরা সবাই স্যালুট করে নির্বাচনে ঝাঁপিয়ে পড়ব। এটাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত। এখানে কোন্দলের কিছু নেই। তারপরও অতীতে কোনো কোনো নেতা কোন্দল করেছেন, আদর্শ বিচ্যুত হয়েছেন। এখানে আদর্শের বিচ্যুতি হলে তাকে আমরা সাংগঠনিকভাবে মোকাবেলা করব।

চাঁপাইনবাবগঞ্জটিভি : সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে কোন কাজগুলোকে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত...
গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস : রহনপুর পৌরসভার দুইবার মেয়র এবং ৫ বছর এমপি হিসেবে কাজ করার পর আমার কাছে মনে হয়েছে, সর্বপ্রথম মানুষকে সচেতন এবং বিবেকমান মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। বিবেকমান মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে না পারলে আমরা যতই উন্নয়ন করি না কেন, আমাদের উন্নয়নগুলো অর্থবহ হয় না। বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। আমরা কৃষকের সন্তান। কৃষকদের জন্য আরো ভালো কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়, যাতে করে ভূগর্ভস্থ পানি দিয়ে ধান চাষ না করে উপরিস্থ পানি অর্থাৎ নদী-নালা থেকে পানি সংগ্রহ করে ধান চাষ করা যায় এরকম কিছু প্রকল্প আমার এলাকায় বাস্তবায়ন করতে চাই। যেমন চন্দনাতে ৩২ কোটি টাকা প্রকল্পের কাজ শেষ করে উদ্বোধন করেছি। এছাড়া আমার নির্বাচনী এলাকায় অতিদ্রুত টেকনিক্যাল স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা করছি। কেননা সাধারণ শিক্ষা গ্রহণ করে চাকরি পাওয়া যায় না; কিন্তু কারিগরি শিক্ষা যদি আমরা যুবকদের দিতে পারি, তাহলে সাথে সাথে তারা চাকরি পাবে। কাজেই হাজার হাজার যুবক যেন কারিগরি বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে টেকনিক্যাল শিক্ষা নিয়ে চাকরিতে চলে যেতে পারে- এই ব্যবস্থাকে আমি গুরুত্ব দিব।

চাঁপাইনবাবগঞ্জটিভি : সীমান্তঘেঁষা জেলা হিসেবে মাদক একটি বড় সমস্যা, এটি প্রতিরোধে আপনার ভূমিকা...
গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস : মাদক প্রতিরোধ শুধু প্রশাসনিক ব্যবস্থা দিয়ে হবে না। এর জন্য আমাদেরকে সচেতন হতে হবে। আমরা যারা জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ, শিক্ষকম-লী, অভিভাবক সবাই যদি সচেতন হই তাহলে এটা রোধ করা সম্ভব। কেননা অভিভাবকদেরও তার সন্তান কোথায় গেল, কি করছে সে সম্পর্কে খোঁজখবর রাখাটা জরুরি। আর মাদকের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি প্রয়োজনবোধে কঠোর অ্যাকশনে যেতে হবে। যে অ্যাকশনের কথা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছে। সেটিকে আমরা সাধুবাদ জানাই।

চাঁপাইনবাবগঞ্জটিভি : দল বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু...
গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস : জনগণ যাকে ভোট দেবে সে নির্বাচিত হবে। আমি একজন জাতীয় সংসদ সদস্য। আমার চোখ দিয়ে যেটা বুঝি, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার বিভিন্ন সেক্টরে যত উন্নয়ন করেছে, আমার মনে হয় এই উন্নয়নের কারণে জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে। দ্বিতীয়ত, দুটি জাহাজ; এর মধ্যে এক জাহাজের ক্যাপ্টেন শেখ হাসিনা আরেকটি জাহাজের ক্যাপ্টেন বেগম খালেদা জিয়া। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার জাহাজ সমুদ্রে ডুবে গেছে। আমার মনে হয় না যে, সেটাকে টেনে তুলে তীরে আনা যাবে। আর শেখ হাসিনার যে জাহাজ, সেটি ১০০ মাইল স্পিডে চলছে। এই জাহাজেই জনগণ চড়বে। অর্থাৎ নৌকায় ভোট দিবে এবং এই জাহাজই বাংলাদেশকে মালয়েশিয়া-সিঙ্গাপুরের মতো আধুনিক রাষ্ট্রে পরিণত করবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জটিভি : দলীয় মনোনয়ন না পেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছে আছে কিনা...
গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস : কখনোই নই। আমি ৪০ বছর ধরে সংগঠনের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করে আসছি। এই সংগঠন করার জন্য আমাকে ৬ বছর ৩ মাস কারাগারে থাকতে হয়েছে। ২৯ মাস ফেরারি থেকেছি। ২২টি মামলার আসামি হয়েছি। দাদার কাছ থেকে প্রাপ্ত ৫২ বিঘা জমি, দুটি বাগান, দুটি দোকান আমরা বিক্রি করে দিয়েছি শুধু রাজনীতির কারণে। তাই বলব, যাদের জীবনে এত ত্যাগ-তিতীক্ষা তারা কখনোই আদর্শ বদলাতে পারে না।

চাঁপাইনবাবগঞ্জটিভি : চাঁপাইনবাবগঞ্জটিভি পরিবারকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ
গোলাম মোস্তফা বিশ্বাস : আপনাদেরও ধন্যবাদ।


কনটেন্ট চুরি আপনার মেধাকে অলস করে তুলে, আমরা এ নিন্দনীয় কাজকে নিরুৎসাহিত করি। এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

About chapainawabganj tv

বিজ্ঞাপন

src="https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js?client=ca-pub-5331163805288347" crossorigin="anonymous">

7