ছোটবেলার খেলাঘর নয় তবুও ভাঙছে সম্পর্কের ঘর

আব্দুর রব নাহিদ: ছোটবেলায় ধুলাবালির ঘরে পুতুলের বিয়ে, আবার খেলা শেষেই ভেঙ্গে যায় সেই ঘর। সেই ছোটবেলার খেলাঘর না হয়েও নানা করণে ভাঙছে বাস্তবের সম্পর্কের ঘর, ভালবাসার সংসার।
কেন ভাঙছে সম্পর্কের ঘর-এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে অনেকেই বলছেন, একে অন্যের প্রতি ছাড়  দেয়ার মানসিকতা না থাকা, কম বয়সে মেয়েদের বিয়ে দিয়ে দেয়া, একান্নবর্তী পরিবারের চেয়ে আত্মকেন্দ্রিক চিন্তা, মাদকে আসক্ত হওয়া, পরকীয়া, কম দেনমোহরসহ আরো অনেক কারণই দায়ী।
গেল বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় সবচেয়ে বেশি বাল্য বিয়ে ঠেকিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। তারপরও প্রশাসনের এ নজরদারী এড়িয়ে ওই এলাকার অষ্টম শ্রেণীতে পড়–য়া মেয়ের সাথে নিবন্ধন ছাড়ায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের এক ছেলের বিয়ে সম্পন্ন হয়। এর কয়েক মাসের মাথায় দুই পরিবারের মধ্যে সমস্যার কারণে সম্পর্কটি ভেঙ্গে যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছিুক বাল্য বিয়ে করা ওই ছেলে জানান,পরিবারের ইচ্ছায় বিয়েটা করেছি, কিন্তু এখন বুঝতে পেরেছি, বাল্য বিয়ের কারনেই তাদের সম্পর্কের এ অবনতি ঘটেছে, সে সমস্যা গুলো সৃষ্টি হয়েছিল তা একটু প্রাপ্ত বয়স্ক হলে আমার বউ অবশ্যই মানিয়ে নিতে পারত, সম্পর্কটা এভাবে ভেস্তে যেত না।
এমন চিত্র অনেক পরিবারেই ঘটেছে এবং ঘটছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ম্যারিজ রেজিস্টার ও কাজি সমিতির তথ্য বলছে ২০১৭ সালে নিবন্ধনকৃত ৯ হাজার ১৫২টি বিয়ের মধ্যে জেলায় বিয়ে বিচ্ছেদের সংখ্যা ২হাজার ৬১১টি। সংস্থাটির পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৬ সালে নিবন্ধনকৃত বিয়ের সংখ্যা ছিলে ১১ হাজার ৪৭৩টি এর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটেছে ২৩০৮টি। এর আগের বছরে ২০১৫ সালে ১৪ হাজার ৫৩২টি বিয়ে নিবন্ধিত হয়েছিল, এরমধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে ১৭৪৫টি। ২০১৪ সালে নিবন্ধনকৃত বিয়ের সংখ্যা ছিল, ১৪ হাজার ৮৮৪টি, বিচ্ছেদ ঘটে ১ হাজার ২৬৭টি। ২০১৩ সালে নিবন্ধনকৃত বিয়ের সংখ্যা ছিলো ১৬ হাজার ১৩১টি এরমধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে ১২১৮টি। ২০১২ সালে বিয়ে নিবন্ধন হয়েছিল ১৬ হাজার ৮২৮টি, এরমধ্যে ঘর ভেঙ্গে যায় ৯৩৭টি পরিবারের। ২০১১ সালে নিবন্ধনকৃত বিয়ের সংখ্যা চিলো ১৫ হাজার ২২৭টি এর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে ৬৪৭টি। ২০১০ সালে বিয়ে নিবন্ধন হয়েছিল ১৬ হাজার ১৭টি এরমধ্যে বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে ৬১৪টি পরিবারে।
২০১০ থেকে ২০১৭ সালের বিয়ে নিবন্ধনের সংখ্যাও ক্রমস কমেছে। এর কারণ সম্পর্কে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাল্য বিয়ের বিষয়ে সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণেই অনেক বিয়েই নিবন্ধন ছাড়ায় সম্পন্ন হয়ে যাচ্ছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ম্যারিজ রেজিস্ট্রার ও কাজী সমিতির সাধারণ সম্পাদক, কাজী মো. আব্দুল বারী কিছুটা আক্ষেপের সুরেই জানান, বাংলাদেশের মধ্যে একমাত্র চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় বিবাহ করা ও তালাক সহজ বিধায়, এ এলাকায় তালাকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। প্রায় ৩০ শতাংশই বিয়েই বিচ্ছেদ হয়ে যাচ্ছে।
প্রায় ২৭ বছর থেকে দায়িত্ব পালন করা এ কাজী তালাকের বেশ কিছু কারণও তুলে ধরেন, তিনি বলেন অনেক সময় দেখা যায় প্রবাসী স্বামীর ঘর করতে চান না অনেকেই, ফলে তালাক নিয়ে নিচ্ছেন, এছাড়াও কম দেনমোহরের কারনেও দ্রুত বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটছে।  তিনি আরো জানান, বাল্য বিয়ে রোধে মফস্বল এলাকায় প্রশাসনের কঠোর অবস্থান থাকলেও জেলা সদরে নিবিঘেœ বাল্য বিবাহ সম্পাদন ও নিবন্ধন হচ্ছে। এটি বন্ধে তিনি প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

About chapainews

0 Comments:

Post a Comment

বিজ্ঞাপন

src="https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js?client=ca-pub-5331163805288347" crossorigin="anonymous">

7