ট্রেনে কাটা পড়ে তিন জনের মৃত্যু, ভুতপুকুর মহল্লায় শোকের ছায়া

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ট্রেনে কাটাপড়ে তিনজন মারা গেছেন। সোমবার সকাল পনে ৯টার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহী রেলপথের হাজির মোড় এলাকায় এ দূর্ঘটনা ঘটে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলস্টশন থেকে ছেড়ে যাওয়া সিক্সডাউন মেইল ট্রেনের সাথে ভুটভুটির ধাক্কা লাগে। এতে ঘটনাস্থলেই ভুটভুটি চালক ও দুই যাত্রী মারা যান।
নিহতরা হলেন, আলীনগর ভুতপুকুর এলাকার আব্দুল গনির ছেলে ফুলচান (৫৫), রইস উদ্দীনের ছেলে শেহের আলী(৪৫)। ভুটভুটি চালক আমনুরা এলাকার নাইমুল ইসলাম।

ফুলচানের মাও মারা গিয়েছিলেন ট্রেনে কাটা পড়ে

মারা যাওয়া তিন জনের মধ্যে দুইজনের বাড়ি আলিনগর ভুত পুকুর মহল্লায়। ফুলচান ও শেহের আলী সম্পের্কে চাচা ভাতিজা। ফুলচানের ভাতিজা শেহের আলী। পাড়াজুড়েই শোকের ছায়া।
ফুলচানের বাড়ির উঠানে মরদেহ নিয়ে আসা হয়েছে। স্বজনদের কান্নায় ভারি পরিবেশ। পাড়াপ্রতিবেশীরা ফুলচানের স্ত্রী সুফিয়া বেগমকে সান্তনা দিচ্ছেন। প্রলাপ করে বলছেন মাও ট্রেনে কাটা পড়ে পড়েছিলো, ব্যাটাও ট্রেনে কাটা পড়েই মারা গেলে।
ফুলচানের স্ত্রী সুফিয়া বেগম বলেন, ‘হামার শ^াশুড়ীও ট্রেনে কাটা পড়া মর‌্যাছিলো, হামার স্বামীও ট্রেনে কাটা পর‌্যায় মরা গেল।’ এরপর কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি।
ফুলচানের চাচাতো ভাই কেতাবুল বলেন, ফুলচানের মা  জোলেশান বেগম ১৯৯৩ সালের দিকে গরু আনতে গিয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছিলো। তারপর ফুলচানরা অনেক কষ্ট করে বড় হয়্যাছে।
ফুলচানের দুই ছেলে এক মেয়ে, বড় মেয়ে নাসরিন খাতুনের বিয়ে হয়েছে। বড় ছেলে হাবিবুর রহমান সাগর ও ছোট ছেলে আতাউর রহমান নয়ন সবে মাত্র কাজ করা শুরু করেছে। একজন মাছের আড়ৎ এ কাজ করে, একজন একটি জুতার দোকানে বিক্রয় কর্মীর কাজ করে। ফুলচান মাছ ধরা শ্রমিক হিসাবেই কাজ করে সংসার চালাতেন।

ডিম বিক্রি করেই দুই ছেলেকে পড়ালেখা করাতেন শেহের আলী

ট্রেনে কাটা পড়ে মারা যাওয়া ফুলচানের ভাতিজা শেহের আলী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের মহানন্দা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সন্ধ্যায় ডিম বিক্রি করতেন। শেহের আলীরও তিন সন্তান। এক মেয়ে ও দুই ছেলে। বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে।
বড় ছেলে মেহেদী হাসান এইচ এসসি ২য় বর্ষের ছাত্র, ছোট ছেলে জায়েদ হাসান এবার এসএসসি পাস করেছেন।
জাহেদ হাসান বলেন, আব্বা বাসস্ট্যান্ডে ডিম বিক্রি করেই আমাদের সংসার চালাত, মাঝে মধ্যে রাতে মাছ ধরতে যেত। গতকাল মাছ ধরতে গেছিলো। হামরা দুই ভাইতে পড়তে কহিত সব সময়ই, সবসময় কখিত পড়ালেখা কর, যা টাকা পয়সা লাগবে ওটা লিয়্যা তোরা ভাবিস না, তোরা ভাল করা পড়।  
শেহের আলীর প্রতিবেশী তরিকুল ইসলাম বলেন, দুটা ছেলেকে পড়ালেখা করানো, আর সংসার খরচ চালিয়ে বাড়িটা করতে পারেনি শেহের আলী, কোন রকমে থাকত। ওই ছিলো পরিবারটার এক মাত্র উপার্যম ক্ষম, এখন পরিবারটা অথয় সাগড়ে পড়ে গেল। ছেলে দুটাও আয় উপার্যন করা শিখেনি।

চার সদস্যের তদন্ত কমিটি


ট্রেন দূর্ঘটনায় ৪ সদস্যের কমিটি গঠন গঠন করা হয়েছে। রেলের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক(পাকশি) সাহেদুল ইসলাম, সহকারি পরিবহন কর্মকর্তা (পাকশি) সাজেদুল ইসলামকে প্রধান করে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। গঠিত কমিটিকে সাত কার্য দিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। 




রেল ক্রসিং, তবু নেই গেট- গেটম্যান

চাঁপাইনবাবগঞ্জ –রাজশাহী রেলপথে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেল স্টেশন পার হতেই আলিনগর উচ্চ বিদ্যালয় এলাকায় প্রথম রেল ক্রসিং। এটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেল স্টেশন থেকে নিয়ন্ত্রন করা হয়। এ পথ দিয়ে ট্রাক বাসসহ অন্য যানবহন শহরের বিভিন্ন প্রান্ত যাতায়াত করে। এই ক্রসিং পার হয়ে কিছু দূরেই হাজির মোড়। সেখানেও ভুতপুকুর গ্রামসহ আশে পাশে গ্রামের যাওয়ার পাকা সড়ক। হাজির মোড়েও ব্যস্ততা কম নয়। সেখান নিয়ে বাসট্রাক না চললেও ভুটভুটি, অটোসহ বিভিন্ন যানবহন ঠিকই রেলপথের উপর দিয়ে পার হয়।
স্থানীয়রা দাবি জানিয়েছেন, আলীনগর হাজির মোড় এলাকার রেল ক্রসিং এ, রেলের গেট ও গেটম্যান দেয়া হোক। এসআই জাফর নামে একজন বলেন, আলীনগর ভুত পুুকুর সহ আশেপাশের কয়েকটি গ্রামের মানুষের চলাচল এই রেল ক্রসিং দিয়ে কিন্ত এখনো এখানে কোন গেটম্যান নেই। এতে করে এর আগেও এখানে দূর্ঘটনা ঘটেছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেল স্টেশনের স্টেশন মাস্টার শহিদুল আলম বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেল স্টেশনের আওতার মধ্যে দুইটি ক্রসিং এর একটি স্টেশন মাস্টার নিয়ন্ত্রন করে, হাজির মোড় ক্রসিংটি অরক্ষিত। এসব ক্রসিং এর দ্বায়িত্ব রেলের প্রকৌশল শাখার।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের এ কে এম গালিভ খান, জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খান জানান, দূর্ঘটনার যে স্থানে ঘটেছে। সেখানে অবশ্যই রেলের গেট থাকা প্রয়োজন ছিলো। আমি বিষয়টি রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার সহ রেলের উর্দ্ধতন কতৃপক্ষকে জানিয়েছি, যেন হাজির মোড়ে রেলের গেট দেয়া হয়।

 

 

আমাদের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন https://bit.ly/2Oe737t কনটেন্ট চুরি আপনার মেধাকে অলস করে তুলে, আমরা এ নিন্দনীয় কাজকে নিরুৎসাহিত করি। এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

About nahid

0 Comments:

Post a Comment

বিজ্ঞাপন

src="https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js?client=ca-pub-5331163805288347" crossorigin="anonymous">

7