অদম্য ইচ্ছার কাছে হার মেনেছে শারিরিক প্রতিবন্ধকতা

আকবর হোসেন, প্রতিবন্ধকতা জয় করে সামনে এগিয়ে যাওয়া এক যুবক। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউনিয়নের আব্দুল লতিবের ছেলে আকবর, নিজের ইচ্ছা শক্তির জোরে কারো কাছে বোঝা হয়ে যাননি। নিজের আয়ের টাকা দিয়েই, করছেন পড়ালেখা, সেই সাথে পরিবারের পাশেও দাঁড়িয়েছেন। বাড়ি তৈরীতেও বাবাকে দিয়েছেন বড় অংকের অর্থ। আকবরের শারিরিক প্রতিবন্ধকতা যেন হারই মেনেছে তার অদম্য ইচ্ছার কাছে। 
 


গোবরাতলা ইউনিয়নের বেহুলা মধ্যপাড়ায় আকবরের বাড়িতে গিয়ে রবিবার কথা হয় তার সাথে। জানালেন, বাড়ির পাশের বেহুলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গ্রামের অন্য ছেলেদের মত তারও পড়ালেখা শুরু হয়। পঞ্চম শ্রেনীতে পাস করে ভর্তি হয় একই ইউনিয়নের মহিপুর এসএএম উচ্চ বিদ্যালয়ে। ভালই চলছিল, অষ্টম শ্রেনীতে পড়ার সময় হঠাৎই তার দুই পায়েই চলাচলের শক্তি কমতে থাকে। গ্রামের চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা করানো হলেও পায়ে স্বাভাবিক হাঁটাচলার শক্তি ফিরে পাননি আকবর। পরে আকবর কে নেয়া হয় বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজে, সেখানে চিকিৎসার পরও স্বাভাবিক হয়নি আকবরের পা। আকবর জানান, চিকিৎসকরা জানিয়েছে তিনি আক্রান্ত হয়েছিলেন, জিবিএস ভাইরাসে, তবে গ্রামে তার সঠিক চিকিৎসা হয়নি, আর ঢাকা যেতে যেতে দেরি হওয়ায়, অনেকটা চিকিৎসাহীনতায়, মেনে নিয়ে হয়েছে এ নিয়তি।   
ছেলের এমন অবস্থা দেখে আকবরকে, মা জুলেখা বেগম দর্জির কাজ শেখানোর জন্য একই গ্রামের আজিজুল ইসলামের কাছে দেন। তার কাছে ৬ মাসেই আকবর শিখে ফেলে দর্জির কাজ। হুইল চেয়ারে বসে আকবর, বাড়িতেই করতে থাকলেন দর্জির কাজ। পায়ের ভরে দাঁড়াতে না পারা, আকবর নিজের আয়ের উপর ভর করে ফের শুরু করলেন পড়ালেখা।
মহিপুর এসএএম উচ্চ বিদ্যালয়ে ৯ম শ্রেনীতে পড়ালেখা শুরু করেন। দশম শ্রেনীতে উঠেই আকবর চলে আসেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে, শহরের একটি মেষে থেকে নিতে থাকেন এসএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি। ২০১১ সালে পাস করেন এসএসসি। এরপর ভর্তি হন মানবিক বিভাবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি কলেজে। ২০১৩ সালে পাস করেন এইচ এসসি। এরপর একই কলেজে ¯œাতক শ্রেনীতে বাংলা বিভাগে ভর্তি হন আকবর হোসেন। ২০২০ সালে তিনি ¯œাতকে উত্তির্ন হয়ে, বর্তমানে বাংলা বিষয়েই ¯œাতকত্তোর পড়ছেন আকবর।
আকবর দর্জির কাজ করেই জুগিয়েছেন তার পড়ালেখার সব খরচ। চাঁপাইনবাবগঞ্জে থাকার পরও কিভাবে কাজ করতেন এমন প্রশ্নে আকবর জানান, যখন থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে থাকা শুরু করেছি, তখন প্রতি সম্পাহে একদিন বাড়িতে আসতাম। একদিন বাড়িতে থেকে ওই সপ্তাহের সবগুলো কাজ করতাম, এতে সপ্তাহে আমার ৫০০-৮০০ টাকা আয় হয়ে যেত। আবার কোন সপ্তাহে বেশি হত, আবার কমও হত, তারপরও মাসে ৪০০০-৫০০০ টাকা আয় হত। এ টাকা দিয়েই আমি মেষের ভাড়া, খাওয়াখরচ ও পড়ালেখার খরচ জুগিয়েছি। আমি বাড়ি থেকে টাকা পয়সা নিতামই না।
এরপর অনার্স পড়ার সময় ৩য় বর্ষে, মোবাইলের সিম বিক্রি করতাম, কলেজের গেটে। সেখানেও আমার ভাল আয় হত। প্রায় আড়াই বছর এ কাজ করেছি।
এরপর জমানো টাকা দিয়ে, স্টক বিজনেস শুরু করেছিলাম। ধান কিনে রেখেছিলাম, সেই ধান বিক্রি করে যে টাকা লাভ হয়েছিলো, সেখানে থেকে ৪-৫ লাখ টাকা তা আব্বাকে বাড়ি করতে দিয়েছি। আব্বার, আর আমার এক ভাই ও আমার টাকায় এখন ছাদ ডালাই সহকারে বাড়িটা করেছি। আমি ১০টাকা পেলে সেটাকে কিভাবে ১৫ টাকা করব সেই চিন্তায় করি সব সময়। আগামীতে স্টক বিজনেস আরো বড় পরিসরে করার চিন্তার কথা জানান আকবর। এতে অন্তত এক বা দুই জনের কাজের সুযোগও হবে বলে মনে করেন তিনি।
প্রতিবন্ধী হয়েও আকবর, নিজেকে কখনো অন্যের বোঝা হতে দেননি, নিজের চেষ্টায় তিনি এখন অন্যকেই সহযোগিতা করেন, কাজের সুযোগও করে দিয়েছেন।
আকবরের বাবা আব্দুল লতিব বলেন, তার ছেলে কষ্ট হলেও পড়ালেখা করেছে। সাথে সাথে কাজ করে পড়ার খরচ চালিয়েছে, আবার বাড়িতেও টাকা দিয়েছে। ‘‘পায়ের সমস্যা থাকলেও, চেষ্টা করেই এতদূর আসছে পার‌্যাছে। হামার, ছ্যালাকে লিয়্যা হ্যামি খুশি। এখন একটা সরকারি চাকরির ল্যাগা চেষ্টা করেছে, দোয়া করি যাতে হামার ছ্যালার আশা পূরণ হয়।

 

 

 

আমাদের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন https://bit.ly/2Oe737t কনটেন্ট চুরি আপনার মেধাকে অলস করে তুলে, আমরা এ নিন্দনীয় কাজকে নিরুৎসাহিত করি। এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

About chapainawabganj tv

0 Comments:

Post a Comment

বিজ্ঞাপন

src="https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js?client=ca-pub-5331163805288347" crossorigin="anonymous">

7