দীর্ঘ বন্ধের পর খুলেছে স্কুল, শ্রেনীকক্ষে ফিরল প্রাণ


করোনার কারনে দীর্ঘ দেড় বছর পর, রবিবার খুলে দেয়া হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ৫৪৪ দিন পর স্কুলে আসতে পেরে আনন্দিত শিক্ষার্থীরা আর শিক্ষকরা বলছেন প্রাণ ফিরল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। সকাল থেকেই চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে ছিলো অনেকটা উৎসবের মতই, স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষার্থীদের বরনের আয়োজন ছিলো সবখানে।


স্কুলের প্রবেশ পথে শিক্ষার্থীদের তাপমাত্রা দেখা ও শিক্ষার্থীদের সাবান দিয়ে হাত ধোয়া নিশ্চিত করে ক্লাসে নিয়ে যায় স্কাউটস সদস্য ও শিক্ষকরা।

স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে শিক্ষার্থীদের একাধিক শ্রেনীকক্ষে ভাগ করে পড়ানো হচ্ছে। নবাবগঞ্জ শহরেরর হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ঘুরে দেখা যায়, সেখানে প্রতিটি কক্ষে ৩০ জন করে শিক্ষার্থী ক্লাস করছেন।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রশিদ জানিয়েছেন জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাঠদানের বিষয়ে সবধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দীর্ঘ বন্ধের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ায় সবার মাঝেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস করার আগ্রহও দেখেছেন তিনি। 

 

‘স্কুলের আনন্দে আজ সাড়ে ৬টায় উঠেছি’

 

নবাবগঞ্জ শহরের মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেনীর শিক্ষার্থী অহনা, দীর্ঘদিন পর স্কুলে এসেছে। স্কুলে এসে ক্লাস করতে কেমন লাগছে এমন প্রশ্নে অহনা জানাল, এতোদিন সকালে একটু দেরি করে উঠতাম, ৯টা বেজে যেত। আজ স্কুলের আনন্দে সাড়ে ৬টায় উঠে রেডি হয়ে স্কুলে চলে এসেছি। অহনার আরেক সহপাঠি তানজিলও একই কথা জানাল। সেও আজ খুব সকালেই উঠে রেডি হয়ে স্কুলে চলে এসেছে।
দীর্ঘদিন বন্ধের পর স্কুল খুলেছে, তাই শিক্ষার্থীদের ফুল দিয়ে বরনও করতে দেখা যায় শিক্ষকদের।
মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশেই জেলার শতবছরের এতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টির ক্লাস রুটিন অনুযায়ী রবিবার ছিলো সপ্তম শ্রেনী ও এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্লাস। সকাল ৮টায় শুরু হয় ৭ম শ্রেনীর ক্লাস।
এর আগে স্কুলে প্রবেশ পথে শিক্ষার্থীদের তাপমাত্রা দেখা ও শিক্ষার্থীদের হাত দোয়া নিশ্চিত করে ক্লাসে নিয়ে যায় স্কাউটস সদস্য ও শিক্ষকরা।
৭ম শ্রেনীর শিক্ষার্থীদের জোড় ও বিজোড় রোলের বিত্তিতে দুই কক্ষে পাঠদান করাতে দেখা যায়। ৭ম শ্রেনীর ক শাখার শিক্ষক আশরাফুল হক জানান, তার ক্লাসে ৩০ জন শিক্ষাথীর মধ্যে ২০ জন আজ এসেছিলো। আরেক কক্ষে একই শ্রেনীর অন্য শিক্ষাথীদের পাঠদান করাচ্ছিলেন শিক্ষক আব্দুল বাশির তিনি জানালেন তার ক্লাসে ২৪ জন শিক্ষার্থী এসেছে। প্রথম দিন অনুপস্থিত থাকা শিক্ষার্থীদের বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়ার কথা জানান শিক্ষকরা। 

সপ্তম শ্রেনীতেই প্রথম স্কুলে আসা 


 

পঞ্চম শ্রেনী পাশ করার পর, ৬ষ্ঠ শ্রেনী ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের একটা নতুন অধ্যায়। নতুন একটা পরিবেশে নতুন স্বপ্ন হাতছানি দেয়, কিশোর শিক্ষার্থীদের । কিন্ত ফানদিন হাসানের কাছে আজই প্রথম স্কুল। স্কুল ড্রেসে আজই অনেকটা প্রথমবারের মতই আজ স্কুলে আসা।
৭ম শ্রেনীতে পড়া ফারদিন বলেন, দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর পর, স্কুলে আসলাম, ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে ভর্তি হয়েই তো কিছুদিন পর করোনা শুরু হয়ে গেল, তারপর স্কুল বন্ধ হয়ে যায়। এরপর অনলাইনে ক্লাস পরীক্ষা হলেও আজই প্রথম স্কুল ড্রেস পড়ে স্কুলে আসলাম। আমার কাছে স্কুলের প্রথম দিনই মনে হচ্ছে যদিও এখন আমরা ৭ম শ্রেনীতে উঠে গেছি।   

শিক্ষার্থীদের মানসিক শক্তি জোগানো ও বাড়তি ক্লাস দিবেন শিক্ষকরা  


 

দীর্ঘদিন পর শ্রেনীকক্ষে পাঠদান শুরু হয়েছে, এতে শিক্ষার্থদের মতই যেন খুশি শিক্ষকরা। তারা বলছেন শ্রেনীকক্ষে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সে  সম্পর্ক তা অন্য কোন মাধ্যমে খুব বেশি হয় না। যদিও আমরা অনলাইনে ক্লাস নিয়েছি তবুও শ্রেনী কক্ষে ফিরে আসতে পেরে ভাল লাগছে।
হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সাদিকুল ইসলাম বলেন ‘‘ অনেক দিন স্কুল বন্ধ থাকার পর আজ খুলেছে, ছাত্রদের দেখতে পাচ্ছি এজন্য অত্যান্ত, অত্যান্ত ভাল লাগছে। এতোদিন ছেলেদের সাথে দেখা না হওয়ায় কষ্টের কারন ছিলো। এখন তাদের সাথে কথা হবে, তাদের কার কি অবস্থা তা সম্পর্কে আমরা জানব, এ বন্ধের সময়ে তাদের যে পড়ালেখায় ক্ষতি হয়েছে তা আমরা পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করব।
প্রথম দিন তাই তাদের মানসিক দিকটা বুঝার চেষ্টা করছি, অনেকেই আজই প্রথমবার স্কুলে এসেছে এমনও আছে, সবার মানসিক শক্তি যেন বাড়ে সে দিকে আমরা খেয়াল রাখছি।
আরেক শিক্ষক আব্দুল বাশির বলেন, যে ভাবে পড়ালে ছাত্রদের সুবিধা হয়, সেভাবেই আমরা ক্লাস নিব, প্রয়োজনে বাড়তি ক্লাস নিব আমরা।
মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক তানজিমা মনিব ইলোরা জানান, এতো দিন বাড়িতে থাকতে থাকতে শিক্ষার্থীদের মনে যে শূণ্যতা এসেছে, সেটা কাটিয়ে উঠাতে আমরা চেষ্টা করব, তাদের সাথে কথা বলে, প্রথমে তাদেরকে নতুন পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে শেখানো, তারপর ধীরে ধীরে পড়ালেখা শুরু করা। 


 খুশি ঝালমুড়ি ও চটপটি বিক্রেতারাও 

 

দীর্ঘ বন্ধের পর, খুলেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠান গুলোর সামনে বাহারি সব খাদ্যপন্য বিক্রি করতেন তারা। করোনার কারনে তাদের অনেকেই ভিন্ন এতোদিন চলে গিয়েছিলেন ভিন্ন পেশায়। তবে স্কুল খোলার কারনে ফিরে এসেছেন আবারো, কেউ নিয়ে এসেছিলেন ঝালমুড়ি, বারোভাজা, কেউবা ফুচকা, কারো কাছে ছিলো চটপটি।
দীর্ঘদিন পর স্কুলে শিক্ষার্থীরা আসায়, চটপটি,বালোভাজা ওয়াদের বিক্রি হয়েছিলো ভালই। যদিও করোনারকারনে বাইরের খাবার গ্রহনে বারণই ছিলো, তবওু অনেক শিক্ষার্থীকেই খেতে দেখা যায়।  
আদিল হোসেন নামে একজন বিক্রেতা জানান, তিনি দীর্ঘ ৩০ বছর থেকে হরিমোহন, গার্লস, মডেলের সামনে মুখরোচক বিভিন্ন খাবার বিক্রি করে আসছিলেন। করোনার সময় বাড়িতেই বসে ছিলেন এক রকম, অনেক কষ্টে চলেছে সংসার। আজ স্কুল খুলেছে, আসলাম যা দশটাকা ব্যাচাবিক্রি হয়, তাতেই চলতে পারব।

আমাদের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন https://bit.ly/2Oe737t কনটেন্ট চুরি আপনার মেধাকে অলস করে তুলে, আমরা এ নিন্দনীয় কাজকে নিরুৎসাহিত করি। এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

About chapainawabganj tv

0 Comments:

Post a Comment

বিজ্ঞাপন

src="https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js?client=ca-pub-5331163805288347" crossorigin="anonymous">

7