রোগির স্বজনরা তাদের কাছে মেহমান


অসুস্থ রোগীকে নিয়ে হাসপাতালে আসেন যেসব স্বজন, রোগিকে নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে গিয়ে অনেক সময়ই তাদের নিজেদের খাবারের ঠিক থাকে না, আবার অনেকেই হোটেলে দাম দিয়ে কিনে খেতেও পারেন না, তখন পাউরুটি বা হালকা কিছু খেয়ে থেকে যান।  বিশেষ করে রাতের বেলা এমন দৃশ্য প্রায়ই চোখে পড়ত, হাসপাতাল রোডের বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম মাখনের। তার ভাবনায় আসে, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা রোগীদের মধ্যে সরকারিভাবে খবারের বরাদ্দ আছে, যদিও তা হাসপাতালের বেড সংখ্যা পর্যন্তই, এর বাইরে যারা বেড না পেয়ে মেঝেতে চিকিৎসা নেন, তারাও সরকারি খাবার পান না। আর রোগীর সাথে সহযোগিতার জন্য তার স্বজন একজন দুইজন থাকেনই, তাদেরও বাইরে থেকে খাবার কিনে খেতে হয়।
হাসপাতালের বাড়তি রোগী ও তাদের স্বজনদের খাবারের সমস্যা দূর করতে কিছু করা যায় কিনা এসব ভেবে একদিন রাতে চালডাল দিয়ে খিচুরী রান্না করে ৫ টাকার বিনিময়ে বিতরন কার্যক্রম শুরু করেন, মাখনসহ কয়েকজন। এরপর কাজটা একটু গুছিয়ে করতে নাম দেয়া হয় মেহমান। অলাভজনক কার্যক্রম হিসাবে ২০১৯ সালে যাত্রা শুরু হয় ‘‘ মেহমানের’’।  শুরুতে ৫ টাকা নেয়া হলেও করোনাকাল শুরু হওয়ার পর সম্পূর্ন বিনামূল্যেই মেহমান হাসপাতালে রাতের খাবার বিতরন করে আসছে।  এ রোজায় রাতের খাবারের পাশাপাশি ইফতারও বিতরন করছে মেহমান।
বৃহস্পতিবার বিকাল চারটার দিকে হাসপাতালের রান্নাঘরের সামনে বারান্দায় গিয়ে দেখা গেল, ইফতারের প্যাকেট করছেন মেহমানের অন্যতম সংগঠক জহিরুল ইসলাম মাখনসহ বেশ কয়েকজন। অন্যদিকে রান্নাঘরে ততক্ষনে রান্না শেষ হয়ে গেছে রাতের খাবার। মুরগীর মাংসের বিরানী রান্না হয়েছিল এদিন। সাধারণ খিচুড়ি, বিরানী, সবজি খিচুড়ি রান্না করা হয়। রান্নার দ্বায়িত্ব যারা পালন করেন, তারা সামান্য পারিশ্রমিকে, অনেকটায় স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে এখানে কাজ করেন।
এরপর বিকাল ৫টার দিকে, খাবারের ডেক(বড় পাতিল) ও ইফতারের প্যাকের গুলো হাসপাতালের রান্না ঘরের গেটের সামনে নিয়ে গিয়ে রাখা হলো। এর কিছুক্ষনের মধ্যেই একে একে রোগীর স্বজনরা প্লেট নিয়ে আসতে শুরু করলেন, সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানোর পর একে একে খাবার নিয়ে চলে যান। এটা এখানে অনেটায় নিয়মের মত হয়ে গেছে। খাবার বিতরন কাজে যুক্ত হলেন, ব্যবসায়ী মোমিনুল হক, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সানোয়ার নেওয়াজসহ বেশ কয়েকজন।

মেহমানের কার্যক্রমের সাথে যুক্ত হওয়া প্রসঙ্গে, বলতে গিয়ে ব্যবসায়ী মোমিনুল হক বলেন, এ কাজ করতে আমার কোন ক্লান্তি মনে হয়না, ভালই লাগে। এ কাজের সাথে আমি নিয়মিতই যুক্ত থাকব। স্কুল শিক্ষক সানোয়ার নেওয়াজ বলেন, মেহমানের কাজের সাথে যুক্ত থাকতে পেরে নিজেরই ভাল লাগে।

মেহমানের অন্যতম সংগঠক জহিরুল ইসলাম মাখন জানান, প্রতিদিন ১০০ জনের রাতের খাবার ও ইফতার তারা দিচ্ছেন বিনামূল্যেই। রোজা শুরু, সাথে লকডাউনে রোগীর স্বজনরা কোথায় খাবার খাবে, বাইরে অনেক খরচ হয়, সাধারনত হাসপাতালে যারা ভর্তি হয়, অধিকাংশই গরিব, রোগীর সাথে যারা থাকেন তাদের বাইরে খেতে গেলে অনেক টাকা খরচ হবে, তাদের কথা ভেবেই রোজায় আমরা প্রতিদিনই খাবার বিতরন করছি।
তিনি জানান, ২০১৯ সালে মেহমানের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর, আমরা সম্পাহে তিন দিন রাতে খাবার দিতাম ৫ টাকার বিনিময়ে, এরপর করোনা শুরু হওয়ায়, টাকা নেয়া বন্ধ করে বিনা টাকায় খাবার দেয়া হচ্ছিল। জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে কিছু চাল বরাদ্দ পাওয়া ও অনেকেই এগিয়ে আশায় সপ্তাহে ৫ দিন খাবার দেয়া শুরু হয়, রোজার মাসে এসে আমরা প্রতিদিনই খাবার দিচিছ, সাথে ইফতার। আমাদের ইচ্ছা আমরা প্রতিদিনই খাবার দেয়ার এ কার্যক্রম অব্যাহত রাখার, সবার একটু সহযোগিতা পেলে এটা করতে খুব বেশি সমস্যা হবে না।

 

আমাদের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন https://bit.ly/2Oe737t কনটেন্ট চুরি আপনার মেধাকে অলস করে তুলে, আমরা এ নিন্দনীয় কাজকে নিরুৎসাহিত করি। এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

About nahid

0 Comments:

Post a Comment

বিজ্ঞাপন

src="https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js?client=ca-pub-5331163805288347" crossorigin="anonymous">

7