কেমন আছেন ৭১ এ গুলিবিদ্ধ হুমায়ূন

শফিকুল ইসলাম, শিবগঞ্জ অফিস প্রধান: ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকবাহিনীর গুলিতে গুরুতর  আহত হয়ে  মানবেতর জীবনের ৪৮বছর পার হয়ে গেলেও কেউ খোঁজ নেয়নি ৭৫বছর বয়স্ক হুমায়ুনের। বৃদ্ধ হুমায়ূন বর্তমান বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মোবারকপুর ইউনিয়নের কলাবাড়ি গ্রামে। তাঁর আগে বাড়ি ছিল শ্যামপুর ইউনিয়নের সদাসেবপুর গ্রামে। তাঁর পিতার নাম মৃত সহিমুদ্দিন।
সরজমিনে, তাঁর বাড়িতে গেলে পাকবাহিনীর গুলি করে হত্যা ও আহত করার লোম হর্ষক বর্ণনা দেন হুমায়ূন আলী। তিনি বলেন. যুদ্ধের সময় আশ্বিন মাসের দিকে বন্যা নামার সাথে রবিবার সন্ধ্যায় মল্লিকপুর হাট হতে বাড়ি ফিরি। পরের দিন ৮ অক্টোবর সোমবার শ্যামপুর ইউনিয়নের বাজিতপুর গ্রামের চৌধূরী পাড়ার স্বাধীনতার পক্ষের ও আওয়ামীলীগ সমর্থক  আলতাফ চৌধূরী, মিন্টু চৌধূরী, আব্দুল বারী চৌধূরী, ভোগুরুদ্দিন ও তাঁর দুই জামাই ৭/৮জনকে পাকবাহিনী গুলি করে হত্যার সংবাদ এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে এলাকার অনেকেই আঙ্ককিত হয়ে পড়ে। পরে জীবন বাঁচাতে বাড়ি থেকে পালানো সময় আমার বাড়ি থেকে সামান্য দূরে বাঁশের জঙ্গলের মধ্যে লুকানোর সময় ৩জন পাক বাহিনী আমাদের দেখে ফেলে। তখনই আমাদের  প্রায় ৪০জনকে বাঁশ বাগানের মধেই গোল করে বসিয়ে গুলি করতে শুরু করে। এ সময় ৯জন সঙ্গে সঙ্গে মারা যায় এবং প্রায় ২৫জন গুলিবিন্ধ হয়ে আহত হয়। আরো কয়েকজন পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। গুলিবিদ্ধ ২৫জনের মধ্যে আমি একজন। অমার বাম হাঁটুতে গুলি লেগে সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে যায়। আমি আহত অবস্থায় প্রথমবার ২মাস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলাম। কিছুদিন পরে আরো ৫ মাস হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে কিছুটা সুস্থ হলে বাড়ি ফিরে আসি। তখন থেকেই আমি পুরাপুরি অক্ষম। কোন কাজ করতে পারি না। গরীব মানুষ কোন রকমে বেঁচে আছি। গুলিবিদ্ধ হয়ে ৪৮বছর পার হলেও আমার কেউ কোন খোঁজ খবর নেয়নি। এমনকি আমার বয়স ৭৫বছর পার হয়ে গেলেও বয়স্ব ভাতার কার্ডটি দেয়নি। মাঝে মাঝে কেহ কেহ কিছু জিজ্ঞাসা করতে আসে। তাদেকেও একইভাবে বর্ণনা দিয়েছি। কিন্তু কোন সরকারী লোক বা কোন মুক্তিযোদ্ধা আমার খোঁজ করেনি। শেষ বয়সে  এসে আর কি চাইবো। তবে আছি অত্যন্ত  কষ্টে। পরিবারের অবস্থা  খুব ভাল নয়। তিনি কান্না জড়িত কণ্ঠে আরো বলেন, আমার চোখের সামনে সেদিন আমার নিজের দুই ভাই সহ মোট ৯জন কে গুলি করে হত্যা করেছে পাকবাহিনী। তারা হলো আমার ছোট ভাই ও আদিনা কলেজের ছাত্র গুমানী আলী, একই গ্রামের এমাজ উদ্দিনের ছেলে টাগু আলী, তোবজুল হোসেনের দুই  ছেলে আলতা আলী,ও  মোজাফর হোসেন, রইসুদ্দিন মন্ডলের ছেলে পোলান, মাজেদ মন্ডলের ছেলে সোহরাব আলিম, সলেমানের ছেলে সাহু, শের মোহাম্মদের ছেলে বেলাল ও ঝাটু মাঝি।
তিনি আরো বলেন, যারা গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছিল তাদের মধ্যে আমার ভাই এমাজ উদ্দিন, তোফাজ্জুলের ছেলে একরাম আলী, রইসুদ্দিনের ছেলে নজরুল ইসলামসহ মোট ২৫জন।
হুমায়ূনের ব্যাপারে শিবগঞ্জ উপজলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা কাঞ্চন কুমার দাস বলেন, ঘটনাটি আমার জানা ছিল না। এখন জানলাম। খুব শীঘ্রই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.  শিমুল আখতার বলেন, মুক্তিযোদ্ধা না হলে কেন গুলিবিদ্ধ হলো এমন প্রশ্ন রেখে তিনি সমাজ সেবা অফিসে আবেদনের পরামর্শ দেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ- ১ (শিবগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ডা. সামিল উদ্দিন আহম্মেদ শিমুল বলেন, তার সাথে জরুরী ভিত্তিতে আমি সাক্ষাৎ করে এবং উপজেলা সমাজসেবা অফিস বরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো।






কনটেন্ট চুরি আপনার মেধাকে অলস করে তুলে, আমরা এ নিন্দনীয় কাজকে নিরুৎসাহিত করি। এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

About chapainawabganj tv

বিজ্ঞাপন

src="https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js?client=ca-pub-5331163805288347" crossorigin="anonymous">

7