বাড়ি ফিরলেই আম্মার কাছে নানান ধরনের গল্প শুনি। তিনি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় গল্পকার। পৃথিবীর সব মা'ই সন্তানের কাছে বড় গল্পকার। তাঁর গল্প দিয়েই আমাদের গল্প শুরু হয়। ইদের ছুটিতে বাড়ি আসি বছরে দুইবার। ইউনিভার্সিটি ছুটি দেয়, কিন্তু আসি না, একটা ভাঙা স্কুলে পড়াই। কিছু মাসিক সম্মানী পাই । ওটা দিয়ে চলতে হয়। ইদ আসি আসি করে, তখন গাড়িতে উঠি।
মহানন্দা বাসস্ট্যান্ড থেকে রিকশায় বাড়ির মোড় পর্যন্ত পরিবর্তন আমার চোখে পড়ে। রাস্তা বড় হচ্ছে, বস্তির একাংশ ভাঙা হয়েছে। সাইনবোর্ড টানিয়ে দেওয়া হয়েছে মসজিদ হবে। মসজিদের ডিজাইন সারাদেশে একই রকম। ৬৪ জেলায় হবে। মানুষ নামাজ পড়বে। এ যেন বদলে যাওয়া আমাদের প্রিয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ।স্মৃতি বলতে এখনো অশ্বত্থগাছটা আছ। বাবা তাঁর ছেলেবেলায় রোপণ করেছিলেন। এরপর শুরু হয় আমাদের গ্রাম-শহরের গল্প।
বটতলায় মা আমার প্রতীক্ষায় থাকেন, আমি বটতলায় মাকে দেখে নেমে পড়ি। আমি ছোটবোনের মেয়েকে কোলে নেই, গল্প শুরু করেন মা - ' তোমার নানা মারা গিয়েছে যেদিন -সেইদিন তোমারে জানাই নাই। ... অসুখ ছিল... অনেক দিন পরে থাকলো... তোমার ছোট মামা অনেক দৌড়াদৌড়ি করল, রাজশাহী নিয়ে গেলো... ভালো হলো না।.... তোমার চাচাদের অবস্থা ভালো না.... তোমার রফিক মা বাড়ি বিক্রি করে দিয়ে নাচোল চলে গেছে। ' মার এই সব গল্প বাস্তবে নিয়ে আসে আমাকে। পরিবর্তন গুলি আর দৃশ্যমান হয়। কিছু বিরতি মা আবার শুরু করেন - ' এই যে, আফজাল ( আমার চাচাতো ভাই)। কী ছিল? কী হলো? ব্যাংকে থেকে ঋণ নিয়ে জমি কিনে ছিলো, বাড়ির দলিল রেখে । ... বউটা শেষ পর্যন্ত বাড়ি ছাড়লো। আফজাল দেশ ছাড়লো। শুনছি যে, ইন্ডিয়ায় কার বাড়িতে যেন আছে.... ঐখানে কোন অফিসে কাজ করে । দেনাই দেনাই সব শেষ ব্যাটা।' কল্পনায় আমি আফজাল ভাইয়ের সাদাধ্বধবে শরীরে ভোর সকালে হেঁটে যাওয়া দেখি । দেখি সেই গম্ভীর্যপূর্ণ হাসি। পরক্ষণেই ফিরে আসি সময়ে। যে সময় বড়ই অস্থির। আমরা মাতাপুত্র ততক্ষণে বাড়ির কাছাকাছি। বাড়ির গায়ে রঙ লেগেছে, সাদা রঙের জায়গায় চকলেট রঙ। ক'দিন আগেই রঙ করা হয়েছে।
জাফর জয়নাল
কনটেন্ট চুরি আপনার মেধাকে অলস করে তুলে, আমরা এ নিন্দনীয় কাজকে নিরুৎসাহিত করি। এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।