কৃষির যান্ত্রিকীকরণই ফুটাবে কৃষকের মুখে হাসি

আমাদের দেশের কৃষক ভাইয়েরা ধানের দাম পাচ্ছেন না, এটা গনমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ খবর, সামাজিক মাধ্যমেও আলোচনার ঝড়। দাম না পাওয়া কৃষক ক্ষোভে, নিজের কষ্টের সেই ধানে জমিতেই দিয়েছেন আগুন, এই নিয়ে নানা জনেই নানা মতামত দিচ্ছেন সামাজিক মাধ্যেমে, কেই কেউ বলছেন সরকার কি করছে, কেউ কেউ বাতলে দিচ্ছেন নানা পরামর্শ। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল ইস্যু।

এই বিষয়ে আমার কিছু পর্যবেক্ষণ তুলে ধরি, এইবার বোরো আবাদ গতবারের তুলনায় অনেক বেশি হয়েছে। কেনো বেশি আবাদ করলেন আমাদের কৃষক ভাইয়েরা? একটি কারণ তারা গতবার ধানের দাম একটু বেশি পেয়েছিলেন যতদূর জানি মোটা ধানের দাম ৭০০-৯০০ টাকা/মণ আর চিকন ধান ১০০০ টাকা মণ। গতবছর হাওড়ের আগাম পানি চলে আসায় ফসলের ক্ষতি হওয়ায় ধানের দাম একটু বেশি পেয়েছিলেন। এর ফলশ্রুতিতে এইবার সারাদেশে ধান আর ধান আবাদ। 
সবার প্রশ্ন,সরকার কি করছেন কেনো উৎপাদন খরচের দাম পাচ্ছেন না? কেও কি ভেবে দেখছেন, কোথায় কৃষক ভাইয়েদের বেশি খরচ হচ্ছে? বীজ/সার/ সেচ/ধান রোপণ/ধান কর্তন? আমার মনে হয়ে হয় ধান কর্তন এবং ধান রোপণ। 
কারন বীজ সার সেচের খরচ অনেক কমে এসেছে সরকারের ভর্তুকি প্রদানের জন্য। কিন্তু ধান লাগানো আর ধান কর্তনের শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। একসময় কৃষি শ্রমিক ছিলো ৬৫ ভাগ। এখন তা নেমে এসেছে ৪৭ ভাগে। সুতরাং তাদের মূল্য বেড়ে যাওয়া অনেকটা স্বাভাবিক। ধানকাটা শ্রমিকের দিন দিন মজুরী বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বিপাকে আছেন কৃষকরা।

অনেকে কৃষকদের ধান কেটে দিচ্ছেন খুব ভালো উদ্যোগ। কিন্তু আমার প্রশ্ন হইলো আপনারা কি পরের বছর শ্রমিক না পাওয়া গেলে কি ধান কেটে দিবেন? সবাই আমরা নিউজ এ আস্তে চাই, ভাইরাল হতে চায়। কিন্তু মূল সমস্যা এর দিকে কেও যেতে চায় না। এখনের কৃষি আর বাপ দাদার কৃষি নেই। এখনের কৃষি অনেক পরিবর্তনের কৃষি, সব জায়গায় হিসাবের প্রয়োজন। কারণ কৃষি আর ভরণপোষণ এর মাঝে নেই। বানিজ্যিক কৃষি করতে হলে আপনাকে সব কিছুতে হিসেব করে খরচ করতে হবে।  আমরা ১৯৯০ এর পর থেকে সবাই মুখেই বলে যাচ্ছি যান্ত্রিককীকরণ করতে হবে। কিন্তু জমি কর্ষণ ছাড়া কতোটা জমি যান্ত্রিকীকরণ হয়েছে? শুধু সেচ এলাকা বেড়েছে বিএডিসি, বিএমডিএ, ডিএই, পাউবো এর জন্য। 
অনেকে আবার বলতে পারেন যান্ত্রিকীকরণ সব জায়গায় সম্ভব না, পানি জমে গেলে যান্ত্রিকীকরণ সম্ভব নয়। কিন্তু হাওড় বাদে বোরো মৌসুমে কোথাও পানি আসে না। তাই কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণে প্রকৌশলী ও কৃষি অর্থনীতিবিদদের ভূমিকা রাখার সময় এসেছে। 

এই বিষয় গুলো শুধু আলোচনা আর সমালোচনা না করে সমস্যা চিহ্নিত করে, কৃষি ও কৃষকের কথা মাথায় রেখে আমাদের নতুন নতুন উদ্ভাবনে মনোযোগী হতে হবে। তবেই মিলবে সমাধান, ফুটবে কৃষকের মুখে হাসি।

বর্তমানে আমরা আমি সহ সবাই মূর্হতের মাঝে শিক্ষাবিদ, ডাক্তার, কৃষিবিদ, সমলোচক বা বুদ্ধিজীবীতে রুপান্তরিত হয় চায়ের কাপে ঝড় তুলে। (বিঃদ্রঃ আমি আমার মতামত প্রকাশ করেছি, কাওকে কষ্ট বা প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য নয়। সবাই ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন)   



 লেখক: জয় সাহা, কৃষিবিদ।

মুক্তমত বিভাগের সব প্রকাশিত লেখা, লেখকের একান্ত মতামত। 

কনটেন্ট চুরি আপনার মেধাকে অলস করে তুলে, আমরা এ নিন্দনীয় কাজকে নিরুৎসাহিত করি। এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

About chapainawabganj tv

বিজ্ঞাপন

src="https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js?client=ca-pub-5331163805288347" crossorigin="anonymous">

7