শোষিত, নিপীড়িত মানুষের প্রেরণার উৎস ইলা মিত্র


সমগ্র উপমহাদেশজুড়ে কৃষকসমাজ দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে বেঁচে থাকার লড়াই শুরু করে ১৮৫৫ সালে সাঁওতাল বিদ্রোহের মাধ্যমে। সময়ের পরিবর্তন হলেও ফসলের ওপর অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই কৃষকসমাজকে চালিয়ে যেতে হয়েছে বহুদিন। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ বেনিয়াদের নাগপাশ থেকে উপমহাদেশের মানুষ মুক্তি পেলেও জমিদারী শাসন আর শোষণ থেকে মুক্তি পায়নি কৃষকসমাজ। ১৯৫০ সাল পর্যন্ত কৃষিভিত্তিক যেসব আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল তার মধ্যে অন্যতম ছিল তেভাগার দাবিতে আন্দোলন। তেভাগার দাবির মধ্য দিয়ে পূর্ব বাংলার কৃষককুল নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিক মুক্তির স্বপ্ন দেখেছিলেন। এ আন্দোলনে যারা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তার মধ্যে অন্যমত ছিলেন ইলা মিত্র। ইলা মিত্রের নেতৃত্বে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল এলাকার কৃষকসমাজ সংঘটিত হয়েছিল। এ আন্দোলন নাচোল এলাকায় তীব্র রূপলাভ করেছিল ১৯৪৯ সালের শেষ থেকে ১৯৫০ সালের শুরু পর্যন্ত। রামচন্দ্রপুরহাটের জোতদার পরিবারের ছেলে রমেন মিত্রের বউ ছিলেন ইলা মিত্র। তেভাগার মূল দাবি ছিল কৃষক তার উৎপাদিত ফসলের দুই ভাগ পাবে আর ভূমির মালিক পাবে এক ভাগ। প্রথমে রমেন মিত্র তাঁর জমিতে তেভাগার প্রচলন শুরু করেন। কিন্তু পাকসরকারের বর্বর পুলিশ বাহিনী এ আন্দোলনের নেতাকর্মীদের ওপর বর্বর অত্যাচার শুরু করে। বিশেষ করে ইলা মিত্রের ওপর পাকপুলিশের পাশবিক নির্যাতন পাকশাসনকে করেছিল কলুষিত। কারাবন্দী ইলামিত্র বলেন, পাকশাসকের বর্বর নির্যাতনের শিকার আদিবাসী কৃষক হরেকের আত্মত্যাগ তাঁকে কঠিন হতে অনুপ্রাণিত করে। নাচোলের কৃষক বিদ্রোহের অন্যতম সংগঠক, মেধাবী এক ক্রীড়াবিদ ইলা মিত্র তেভাগার দাবিকে সফল করার জন্য আদিবাসী কৃষকদের আস্থা অর্জনের জন্য তাঁদের যাপিত জীবনের সফল আচার শিখে ফেলেন, এমনকি শিখে ফেলেন সাঁওতালী ভাষাও। ফলে একজন জোতদার পরিবারের বউ, উচ্চশিক্ষিত হয়েও ইলা মিত্র তাঁদের নিকট ‘রানী মা’ নামে পরিচিতি পান। এই রানী মা-ই হয়ে ওঠেন আদিবাসী পরিবারগুলোর প্রেরণা আর শক্তির উৎস।
তেভাগার দাবিতে ইলা মিত্র সমগ্র উত্তরবঙ্গজুড়ে যে গণজাগরণের সূত্রপাত করেছিলেন, পরবর্তীকালে তা স্বাধীনতা আন্দোলনের দাবিকে বেগবান করেছিল।
ইলা মিত্র বাঙালির অহংকার। শোষিত, নিপীড়িত মানুষের প্রেরণার উৎস ইলা মিত্র জন্মেছিলেন ১৯২৫ সালের ১৮ অক্টোবর কলকাতায়। ২০০২ সালের ১৩ অক্টোবর এই মহানায়িকার জীবন অবসান ঘটলেও বাঙালির হৃদয়ে রানী মা হয়ে বেঁচে থাকবেন তিনি অনন্তকাল। আজ ১৮ অক্টোবর তাঁর জন্মবার্ষিকীতে জাগো নারী বহ্নিশিখা তাঁকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে।

মনোয়ারা খাতুন : সদস্য সচিব, জাগো নারী বহ্নিশিখা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ


কনটেন্ট চুরি আপনার মেধাকে অলস করে তুলে, আমরা এ নিন্দনীয় কাজকে নিরুৎসাহিত করি। এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

About chapainawabganj tv

বিজ্ঞাপন

src="https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js?client=ca-pub-5331163805288347" crossorigin="anonymous">

7