আমের ভাল ফলনেও মন ভার ব্যবসায়ীদের

স্বাদও পুষ্টিগুন বিবেচনায় আম আমাদের দেশে সব চেয়ে জনপ্রিয় ফল। আর আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জ। এবার আমের রাজধানীতে ভালই ফলন হয়েছে, তবে বিগত কয়েক বছরের তুলনায় এবছর আমের কম দামে ব্যবসায়ীদের মন ভার। সংস্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিবছরই আমের বাগান বাড়ছে, ফলে বাড়ছে ফলনও , তাই আমের নায্য দাম নিশ্চিত করতে বাড়াতে হবে আমের বহুমুখি ব্যবহার, আর তা করতে না পারলে ভাল ফলনেও ফুটবে না আম চাষীর মুখে হাসি।
এবার আম মৌসুমের শুরুটায় ছিলো রমজান মাসে, এসময় আমের চাহিদা থাকে অনেক কম,সেই সাথে ঈদের আগে সপ্তাহ জুড়ে প্রচন্ড গরমে একসাথে আম পেকে যাওয়ায়, গাছেই ঝরে গেছে আম, তবুও ক্রেতা ও ভাল দাম না থাকায় বাজারে উঠাতে পারেনি অনেক ব্যবসায়ী। ফলে অনেকটা ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা। অন্যদিকে ঈদ পরবর্তী আম বাজারেও ক্রেতাদের আনাগোনা খুব বাড়েনি। আগামীতে আমের বাজার কিছুটা চাঙ্গা হওয়ার সম্ভবনা কথা জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা, আর বাজার চাঙ্গা হলে শুরুর ক্ষতি কিছুটা কাটিয়ে উঠা সম্ভব।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সবচেয়ে বড় ও সারা দেশের মধ্যে বৃহৎ আম বাজারের তকমা গায়ে জড়ানো শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট আম বাজারে শুক্রবার গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকেই বাই সাইকেল ও ভ্যানে করে আম নিয়ে আসছেন আম ব্যবসায়ীরা।

কানসাট ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরে আম বাজার ঘুরে দেখা যায়, ভাল মানের হিমসাগর, বিক্রি হচ্ছে ১৪০০-১৬০০ টাকা মন, একটু বাঝারি মানের ১৩০০ টাকা, আর ছোট সাইজের টা বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা মন দরে। অন্যদিকে ল্যাংড়া ভালটা ১৫০০-১৬০০টাকা মন, অন্যদিকে বিভিন্ন জাতের গুটি আম ৭৫০ থেকে ১০০০ টাকা মন দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারের সবচেয়ে নি¤œ মানের আম গুলো যাচ্ছে, বিভিন্ন জুস কম্পানীতে, দাম ২০০ টাকা মন।
আমের দামদর করতে দেখা যায়, ঝন্টু নামে এক স্থানীয় ব্যাপারীকে। তিনি ঢাকায় আম পাঠাচ্ছেন, তারমুখেই জানা গেল বাজারের দূর অবস্থার কথা। ঝন্টু কমদামে আম কিনতে পারলেও বলছিলেন, আম বাগানে যে পরিমান কীটনাশক দেয়া থেকে অন্য খরচ আছে, আর বাজারে আম বিক্রি করে যে টাকা পাবেন,তাতে ব্যবসায়ীরা অনেকটা ক্ষতির মুখেই পড়েছেন।
আতাউর রহমান এক আম বিক্রেতা জানান, আমের চাহিদা যেন নাই, গতবছর সবচেয়ে খারাপ আমও ৫০০ টাকা মন ধরে জুস কম্পানীর কিনেছে, এবার ২০০ টাকা মন দরেও নিতে চাই না। আমরা যাব কোথায়, জুস কম্পানী যদি বাড়তি দামে কিনে, তাহলে ভাল আমটা আরো বাড়তি দামে বিক্রি করা যায়। অন্তত ২ হাজার থেকে ২৬০০ টাকা মন হয়।
সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে শফিকুল ইসলাম নামে কানসাট শিবনগর এলাকার এক আম ব্যবসায়ী বলে উঠেন, ‘‘ সরকারকে বলেন, হারগে আম গালা যেন বাইরে পাঠানো একটু ব্যবস্থা করে, না হলে আমের দাম নাই, ব্যবসায়ীরা একদম মরে যাবে। ’’

ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় আম পাঠানোর জন্য কানসাট আম বাজারে কয়েকশ আমের আড়ৎ রয়েছে। তবে এবার এখন পর্যন্ত অনেক আড়ৎতেই কার্যক্রম শুরু হয়নি। আর্পিতা ট্রেডার্স নামে একটি আমের আড়ৎ এ গিয়ে কথা হয় এর মালিক রঞ্জন দাসের সাথে, তিনি জানালেন ঈদের পর থেকে বেচাকেনা একটু বেড়েছে, তবে ঈদ করে মানুষজন ঢাকায় ফিরছে, ঢাকায় আমের চাহিদা বাড়বে এখন,বাজারও চাঙ্গা হবে আশা করছি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক, মঞ্জুরুল হুদা জানান, দিন দিন এ জেলায় আমের বাগান বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেই সাথে ফলনও বেড়েছে। এবার বাজারে আমের দাম কিছুটা কম, তবে ব্যবসায়ীরা যাতে আম বিক্রি করতে পারেন, সেই লক্ষে আমরা অনলাইনে বিভিন্ন প্রচারণা চালাচ্ছি, এছাড়াও আম পরিবহনের সময় যাতে কোন ধরনের ঝামেলায় পড়তে না হয়, সে জন্য পুলিশ প্রশাসনের সাথে আমাদের কথাবার্তা হয়েছে, তারা আমাদের সহযোগিতা করছেন। এছাড়াও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে তিনদিন ব্যাপী একটি আম উৎসব এ মাসের শেষে অনুষ্ঠিত হবে, আমের পর্যটন সম্ভবনাকে এগিয়ে নিতেই এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তিনি জানান,  ২৯ হাজার ৫১০ হেক্টর আম বাগানে লক্ষ্যমাত্র আড়াই লাখ মেট্রিকটনের বেশি ফলন হবে।

About chapainawabganj tv

বিজ্ঞাপন

src="https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js?client=ca-pub-5331163805288347" crossorigin="anonymous">

7