কেন দলিল লেখক সমিতির কলম বিরতি


সফিকুল ইসলাম, শিবগঞ্জ অফিস প্রধান :

শিবগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দূর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে দলিল লেখক সমিতির কলম বিরতির মাধ্যমে দলিল লেখা ও জমি রেজিস্ট্রি গত  ৬ ফেব্রুয়ারী হতে বন্ধ আছে।দূর্ভোগে পড়েছে শত শত ক্রেতা বিক্রেতা। সরকার হারাচ্ছে প ্রতিদিন গড়ে  ৩৫লাখ টাকার রাজস্ব। তবে শিবগঞ্জ সাবরেজিস্ট্রার  এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন দলিল লেখক  সমিতি ছাড়াই দলিল লেখার কাজ স্বাভাবিক রয়েছে এবং সরকারী রাজস্ব ঠিকমত আদায় হচ্ছে।  
২২৫কিলোমিটার বর্গমাইল বিশিষ্ট শিবগঞ্জ উপজেলায় ১৫টি ইউনিয়ন ও  ১টি পৌরসভা মিলে প্রায় ৯লাখ জনগনের জন্য একটি মাত্র সাবরেজিস্ট্রার অফিস। যেখানে সারা বছরই প্রতিদিনই জমি ক্রয় বিক্রয় সংক্্রান্ত দলিল লেখা হয়। যা প্রায় একমাস থেকে বন্ধ থাকলে প্রশাসনের টনন নড়েনি বলে ভুক্তভোগীদরে অভিযোগ। জেলা রেজিস্ট্রার  বরাবর দলিল লেখক সমিতির আহ্বায়ক রাকিবুল হকের গত  ১০-০২-২০২২খ্রি স্বাক্ষরিত করা.= আবেদন ও গত ০৮-০২-২০২২ খ্রি. তারিখে সমিতির সহ সভাপতি খাইরল ইসলামের স্বাক্ষরিত জেলা প্রশাসক ববাবর দেয়া  স্মারকলিপি সুত্রে জানা গেছে, শিবগগঞ্জ সাবরেজিস্ট্রার ইউসুফ আলী, তার অফিস সহকারী আল মামুন ও লেখক(মহোরাল) সেলিম রেজা   যোগসাজজ করে  জমি রেজিস্ট্রির ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাচারিতা, দূব্যবহার, অনিয়ম ও অনৈতিকভাবে অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা নিতে দলিল লেখক  সমিতিকে বাধ্য করা ও বিভিন্ন ভাবে হয়রানী করার প্রতিবাদে তাদের অপসারণ দাবী করা হয়েছে। আবেদনে আরো বলা হয়েছে যে সাবরেজিস্ট্রার ইউসুফ আলি শুধু দলিল লেখক নয় সবার সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে  এবং কথায় কথায় দলিল বাতিল করার হুমকী দেয়। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী বার বার অনুরোধ করেও সাব-রেজিস্ট্রার ইউসুফ আলী  তাদের অনুরোধ  কর্ণপাত করেননি। তাই  বাধ্য হয়ে  সাব-রেজিস্ট্রারসহ তিনজনের অপসারন/ বদলীর  দাবিতে গত ৬ ফেব্রুয়ারী হতে কলম বিরতি আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের দাবী পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কলম বিরতি আন্দোলন চলবে। দলিল লেখক  সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম শিলু, কলম বিরতির কমিটির আহ্বায়ক রাকিবুল হক সহ সমিতির অন্যান্য সদস্যরা জানান, একমাত্র সাবরেজিস্ট্রার ইউসুফ আলী, ভারপ্রাপ্ত অফিস সহকারী আল মামুন ও  লেখক(মোহরার) সেলিম রেজার অনৈতিক, অযৌক্তিক ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে কলম বিরতির কারনে দলিল করা বন্ধ রয়েছে। একমাত্র সাবরেজিস্ট্রারের স্বেচ্ছাচারিতার কারনে দলিল করা বন্ধ থাকায় সরকার প্রতিদিন প্রায় ৩৫লাখ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তারা আরো বলেন তাদের স্বেচ্ছাচারিতার কারনে একদিকে যেমন ১৬৫জন দলিল লেখকের  আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় জীবন-জীবীকা কঠিন হয়ে পড়েছে, সাবরেজিস্টার চত্বরে অসহায় দোকানদারদের দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনাহারে অধাহারে দিন কাটাচ্ছ। অন্যদিকে তেমনি শত শত ক্রেতা-বিক্রেতা প্রয়োজনের তাগিদে জমি ক্রয়-বিক্রয় করতে না পেরে চরম হায়রানী ও বিপদের সম্মুখীন হচ্ছে। তারা আরো বলেন, জেলা রেজিস্ট্রার ও শিবগঞ্জ সাবরেজিস্ট্রার আমাদের ১০জনের বিরুদ্ধে সাজানো ঘটনায় সাবরেজিস্ট্রার ইউসুফ আলীর সাথে অসৌজন্যমূলক আচরনের দায়ে শোকজ নোটিস জারী করে বিধি বর্হিভূতভাবে মাত্র ৩দিনে মধ্যে উত্তর দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। যা হয়রানীর আরেকটি পর্য্য়া।
এব্যাপারে শিবগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রার ইউসুফ আল তাদের তিন জনের  বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে  বলেন, দলিল লেখক সমিতির কোন কোন সদস্য মোটা অংকের টাকা বিনিময়ে সরকারী সম্পত্তি কোন ব্যক্তির নামে দলিল করতে আসলে ঘটনাক্রমে জানা জানি হলে তা বাতিল হয়ে যায়।। শুনেছি তারা এর আগেও এধরনের কাজ করার চেষ্টা করেছেন। এ ঘটনায় তার ক্ষিপ্ত হয়ে  আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দাঁড় করিয়ে সম্পূর্ন মিথ্যা  অভিযোগ করেছে। শুধু তাই নয় তারা সরকারী নিয়ম বর্হিভূতভাবে কলম বিরতি চালিয়ে যাচ্ছে। আমাকে বিভিন্ন ভাবে হয়রানী করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমি ও আমার অফিসের লোকজনকে ভয়ভীতি ও গালিগালাজ দিচ্ছে।
এ ব্যাপারে আমি আইনগত ভাবে গত ৯ ফেব্রুয়ারী তাদের ৯জনের বিরুদ্ধে শোকজ নোটিশ করেছি এবং আমার জেলা রেজিস্ট্রার ১ জনের বিরুদ্ধে শোকজ নোটিশ জারি করেছেন। সমস্ত ঘটনায় আমার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। তিনি এব্যাপারে তাদের নিয়ে আলোচনায় বসার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তারা কোন সাড়া দেননি। তিনি আরো বলেন, যেহেতু দলিল লেখার ক্ষেত্রে কোন ক্রেতা-বিক্রেতা  দলিল লেখকের  কাছেই লিখতে বাধ্য নয়। তারা ইচ্ছা করলেই নিজেই দলিল লিখে জমি ক্রয় –বিক্রয় করতে পারেন। সেহেতু জমি ক্রয় বিক্রয়ের ক্ষেত্রে কোন খারাপ প্রভাব পড়েনি। বরং  স্বাভাবিকভাবে প্রতিদিনই জমি ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে। সরকারী রাজস্ব ঠিকমত আদায় হচ্ছে।
এব্যাপারে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাকিব আল রাব্বী কোন মন্তব্য করতে রাজী না হয়ে জেলা রেজিস্ট্রারের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।
জেলা রেজিস্ট্রার আলী আকবর বলেন, তাদের  এ কলম বিরতি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও অনৈতিক। সাবরেজিস্ট্রার অফিসের কোন দলিল লেখক সমিতি কোন সরকারী কর্মকর্তার অপসারণ দাবীতে কলম বিরতি চালাতে পারেন না। কোন অভিযোগ থাকলে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে পারেন এবং উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ সে মোতাবেক তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। তিনি আরো বলেন, তাদের কলম বিরতির ফলে জমি ক্রয় বিক্রয়ের ক্ষেত্রে কোন প্রভাব পড়েনি ও রাজস্ব আদায়ের কোন ঘাটতি হয়নি। সবকিছু নিয়ম অনুসারে হচ্ছে। তিনি বলেন, উভয় পক্ষের আবেদন আমি আমার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। তারা তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।

 

 

আমাদের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন https://bit.ly/2Oe737t কনটেন্ট চুরি আপনার মেধাকে অলস করে তুলে, আমরা এ নিন্দনীয় কাজকে নিরুৎসাহিত করি। এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

About chapainawabganj tv

0 Comments:

Post a Comment

বিজ্ঞাপন

src="https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js?client=ca-pub-5331163805288347" crossorigin="anonymous">

7