ভাল দাম পাওয়ায় খুশি চাঁপাইনবাবগঞ্জের গৃহস্থ-খামারিরা

পবিত্র ঈদুল আজহা ২২ আগস্ট, হাতে আর বেশি সময় নেই। এরই মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের স্থায়ী ১৬টি হাটে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে শুরু হয়েছে পশু বেচাকেনা। গত বছরের তুলনায় এ বছর গত দুই মাসে ভারতীয় গরু আমদানি হয়েছে প্রায় অর্ধেক, আগামী কয়দিনে যদি আমদানি না বাড়ে, তাহলে এ বছর দেশিয় খামারিরা পশুর তুলনামূলক ভাল দাম পাওয়ার আশা করছেন।


চাঁপাইনবাবগঞ্জের স্বরুপনগর গ্রামের রহমত আলী নিজ বাড়িতে গত এক বছর ধরে দুটি গরু লালন-পালন করেছেন। তার একটি গরু ৪২ হাজার টাকায় বিক্রি হয়ে গেছে, তিনি ও তার ৬ জন প্রতিবেশী মিলে ওই গরুটি কোরবানি দিবেন। অন্য গরুটি বিক্রি করতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের অন্যতম পশুর হাট ‘বটতলা হাটে’এসেছেন (বৃহস্পতিবার)। তিনি জানালেন, এবার ভারত থেকে গরু কম আসায় হাটে দেশিয় গরুর দাম ভালই আছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের বটতলা হাট ঘুরে দেখা যায়, হাটে পর্যাপ্ত গরু বিক্রির জন্য আনা হয়েছে, বিক্রেতারদের সিংহভাগই নিজ বাড়িতে ২ থেকে ৩টি গরু লালন-পালন করে বিক্রির জন্য হাটে এনেছেন। এ বছর গরুর দামে খুশি এই সব গৃহস্থ।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার মহারাজপুরের আব্দুল আহাদ গরু বিক্রি করে বাড়ি ফিরছেন, তার খুশি চোখে মুখে। কেমন দাম পেলেন, জানতে চাইলে তিনি জানান, গত বছর বাজার খুবই খারাপ ছিল, এ বছর ভাল আছে। বাজারের এই অবস্থার কারণ জানতে চাইলে তিনি জানান, গতবার হঠাৎ করেই ভারতের গরু ঢুকে গরুর দাম অনেক কমে গিয়েছিল, এতে লাভ হয়নি। এবার ভালই লাভ হয়েছে, আমি খুব খুশি।

গরু কিনতে আসা আলাউদ্দীন জানান, তিনি তার বাজেটের মধ্যেই গরু কিনতে পেরেছেন। তার অভিমত, এবার গরুর দাম খুব চড়াও নয়, আবার খুব যে কম আছে তাও নয়। দাম সহনীয় মনে হয়েছে তার কাছে।

হাটে ছোট সাইজের গরু ৩৫ হাজার থেকে ৪৩ হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে, মাঝারি সাইজের গরু ৪৯ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকার মধ্যে, আর বড় সাইজের গরু ৮০ হাজার টাকা থেকে দেড় লাখ দুই লাখ টাকার মধ্যে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের কয়েকটি বিট ও খাটালের খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত দুই সম্পাহ থেকে ভারতীয় গরু একদমই আসা কমে গেছে। বিট খাটালের সাথে সংশ্লিষ্ট মোক্তার হোসেন নামের একজন জানান, এক সাথে অনেক গুরু আসার যে প্রবণতা থাকে ঈদের আগে, এবার তা আসেনি। এখন খুব বেশি হলে ৮-১০টা করে গরু আসে।

জেলা কাস্টমের তথ্যেও মিলেছে এবার ভারতীয় গরু কম আসার বিষয়টি। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কাস্টমের সহকারী কমিশনার আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, এ বছর জুলাই মাসে ভারতীয় গরু এসেছিল ৩৫ হাজার ৯৬৬টি, গত বছর জুলাই মাসে এ সংখ্যা ছিল প্রায় দ্বিগুণ অর্থাৎ ৬৮ হাজার ৫০১। অন্যদিকে, গত বছর আগস্টে ৬৯ হাজার ৩৬৫টি গরু আসলেও, এ বছর আগস্টে এখন পর্যন্ত এসেছে প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ, মাত্র ১৯ হাজার ২১৬টি।

ভারতীয় গরু কম আসলেও জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস জানিয়েছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জে পর্যাপ্ত কোরবানির দেশিয় গরু ও ছাগল  রয়েছে। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আনন্দ কুমার অধিকারী জানান, এ বছর কোরবানির জন্য উপযোগী পশু রয়েছে ৮৭ হাজার ৭২৩টি। এর মধ্যে গরু রয়েছে ৫০ হাজার ৫৬১টি।

তিনি বলেন, গত বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ৫০ হাজারের মতো গরু কোরবানি দেয়া হয়েছিল, এ বছরও আমরা ধরে নিয়েছি, সেই রকমই হবে। তাই কোরবানির পশুর কোনো সংকট নেই, পর্যাপ্ত পশু নেমেছে হাটগুলোতে। বর্তমানে হাটগুলোতে যে পশুর দাম, এ ধারা অব্যাহত থাকলে, যারা সারা বছরই বাড়িতে দুই তিনটি গরু লালন-পালন করেছেন সেই সব গৃহস্থরা লাভবান হবেন ও আগামীতে গরু পালনে আরো বেশি আগ্রহী হবেন তারা।

এদিকে, হাটগুলোতে পশু চিকিৎসকদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। যারা হাটে গরু কিনতে যাবেন তাদের জন্য বেশ কিছু পরামর্শের কথা জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। সুস্থ ও সবল গরু খুব বেশি শান্ত স্বাভাবের হবে না, কান নাড়াবে, কাছে গেলে গুঁতো দেওয়ার চেষ্টা করবে, অন্যদিকে কৃত্রিম উপারে ওষুধ দিয়ে মোটাতাজা করা গরু হলে, এই সব করবে না, একদম চুপ থাকবে, বয়লার মুরগী যেমন থাকে তেমন থাকবে বলে উদহারণ দেন তারা।

চিকিৎসকরা জানান, দেশি গরুর গায়ে হাত দিয়ে টিপ দিলে দেবে থেকে যাবে না, একটু পরেই উঠে আসবে, কিন্তু কৃত্রিম উপারে ওষুধ দিয়ে মোটাতাজা করা গরুর ক্ষেত্রে মাংস দেবে থেকে যাবে।


About chapainews

বিজ্ঞাপন

src="https://pagead2.googlesyndication.com/pagead/js/adsbygoogle.js?client=ca-pub-5331163805288347" crossorigin="anonymous">

7